মানিকগঞ্জে বাউল গানের আসর থেকে প্রখ্যাত বাউল সাধক আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার এবং জেলা আদালত চত্বরে তার সমর্থকদের ওপর তৌহিদির জনতার হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
আজ রবিবার এক বিবৃতিতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, আবহমান বাংলার অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাহক বাউলদের নির্যাতনের এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো না। এ ছাড়া ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের হুমকির মুখে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নরসিংপুর গ্রামে লালন সাধুসঙ্গ আয়োজন সীমিত করার নিন্দাও জানান তারা।
বিবৃতিতে উদীচীর নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থেকেই সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী অপশক্তি এদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চা বন্ধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিভিন্ন স্থানে লোক সঙ্গীতের আসর বন্ধ করে দেওয়া, লালন উৎসবে বাধা দেওয়া, মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা এবং ধর্মীয় ও জাতিগতভাবে সংখ্যায় কম এমন মানুষদের ওপর ধারাবাহিক হামলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
তারা বলেন, পুলিশ ও প্রশাসনও ধর্মীয় মৌলবাদীদের দাবির মুখে আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার করে সঠিক কাজ করেনি। শুধু তাই নয়, মানিকগঞ্জ আদালত চত্বরে আবুল সরকারের সমর্থকদের ওপর তৌহিদী জনতা নামধারী একদল ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর হামলার নিন্দাও জানান উদীচীর নেতৃবৃন্দ।
তারা বলেন, এদেশে সবাই যার যার মত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করবেন সেটি ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা। অথচ অভ্যুত্থানের পর থেকেই অন্ধকারের অপশক্তি সেই চেতনার সরাসরি বিরোধিতা করে আসছে।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে যারা প্রগতিশীল সংস্কৃতি চর্চায় বাধা দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুলিশ ও প্রশাসনের সমালোচনা করেন উদীচীর নেতৃবৃন্দ। বলেন, বিভিন্ন সময় ধর্মীয় ইস্যু তুলে লোক সংস্কৃতি চর্চায় বাধাদান ও সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার ঘটনা দেখা গেছে। কিন্তু কোনও ঘটনাতেই দৃষ্টান্তমূলক কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি পুলিশ-প্রশাসনকে। মানুষের মতপ্রকাশ, ধর্ম পালন এবং শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতের দায়িত্ব পালনে বারবারই ব্যর্থ হয়েছে তারা।
