
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ২০২৫ সালের ফিসকাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে বাংলাদেশের সরকারি ব্যয় এবং রাজস্ব ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার ঘাটতির বিষয়টি তুলে এনেছে। গত শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত ২০২৫ ফিসকাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাজেট প্রণয়ন ও সরকারি খাতের স্বচ্ছতায় বাংলাদেশ ন্যূনতম আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন সরকার আর্থিক খাতে কিছু সংস্কার কার্যক্রম শুরু করলেও, স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে পূর্ণ সক্ষমতা অর্জিত হয়নি।
রিপোর্টে মোট ১৩৯টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৯টি দেশ—বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালদ্বীপসহ—ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ। বাকিদের মধ্যে ৭১টি দেশ ন্যূনতম মানদণ্ড পূর্ণ করেছে। রিপোর্টে বাংলাদেশের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে, বছর শেষে আর্থিক প্রতিবেদন যথাসময়ে প্রকাশ করা এবং বাজেট নথি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নীতিমালা অনুযায়ী প্রস্তুত করা।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর উল্লেখ করেছে, আগের প্রশাসনের জায়গায় অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। নতুন সরকার পূর্ববর্তী সুপারিশ মেনে চলার পাশাপাশি স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য কিছু সংস্কার শুরু করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের সরকার নির্বাহী বাজেট প্রস্তাব ও পাস হওয়া বাজেট প্রকাশ করলেও, বছরের শেষে আর্থিক প্রতিবেদন সময়মতো প্রকাশিত হয়নি। ঋণ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশিত হলেও, নির্বাহী দপ্তরের ব্যয়ের বিস্তারিত ও রাজস্ব-ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রকাশ করা হয়নি।
সরকার পরিবর্তনের কারণে দেশের সর্বোচ্চ নিরীক্ষা সংস্থা সরকারের হিসাব পর্যালোচনা করতে পারেনি। তবে সংক্ষেপে কিছু ফলাফল জনসমক্ষে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নিরীক্ষা সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বতন্ত্র নয়।
প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন ও লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে আইন নির্ধারিত থাকলেও, জনসাধারণের জন্য সীমিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন চুক্তি উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং পূর্ববর্তী প্রশাসনের চলমান চুক্তি স্থগিত করেছে।
রিপোর্টে মার্কিন সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে, নির্বাহী দপ্তরের ব্যয় বাজেটে স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা, রাজস্ব ও ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র উপস্থাপন, সর্বোচ্চ নিরীক্ষা সংস্থাকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বতন্ত্র ও সক্ষম করা, বার্ষিক বাজেটে সরাসরি প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, সময়মতো নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন সম্পর্কিত তথ্য উন্মুক্ত রাখা।
এই সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন সরকার আর্থিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও জনবিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে এগোতে পারে। তবে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, সঠিক বাস্তবায়ন ছাড়া দেশের আর্থিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা যথাযথ পর্যায়ে পৌঁছানো কঠিন।