নাইট গার্ডের হাতে ভূমি অফিস! সেবায় ভোগান্তি

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চলছে চরম অনিয়ম, দায়িত্বহীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা। অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত তহসিলদার আখতারুল ইসলাম সেলিম নিয়মিত অফিসে না এসে তার জায়গায় আউটসোর্সিংয়ের নাইট গার্ড আলম নূরকে দিয়ে নামজারী, খাজনা আদায়সহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমি সংক্রান্ত কাজ করাচ্ছেন। এতে উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং ও লেমশীখালী ইউনিয়নের সরকারি সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, তহসিলদার সেলিম বেশিরভাগ সময় বাড়িতে অবস্থান করেন। তিনি নিজে অফিসে না এসে আলম নূর নামে এক নাইট গার্ডের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ খতিয়ান, রেকর্ড সংশোধনসহ সরকারি ফাইল পরিচালনা করেন। এর ফলে ভূমি সেবায় ভুল রেকর্ড, হয়রানি ও অনৈতিক আর্থিক লেনদেন বেড়ে গেছে। এমনকি একজনের জমি অন্যের নামে রেকর্ড হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শিক্ষক মফিজুল আলম জানান, তহসিলদার সেলিম মূল ভলিউমে ঘষামাজা করে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে এক পক্ষের পক্ষে ভুয়া খতিয়ান তৈরি করেছেন। তিনি ইতিমধ্যে সেই খতিয়ান বাতিলের আবেদন করেছেন।

বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো, তহসিলদারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে কাজ করা আলম নূরের পরিচয়ও বিতর্কিত। দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নের পেঁচারপাড়ার বাসিন্দা আলম নূর মাদক মামলায় কারাভোগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে আশ্রয়ণ প্রকল্পে রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে রাখা, বিদেশি নাগরিক আইনে মামলা, এমনকি নানা অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে। তবু তিনি দিনের পর দিন সরকারি ভূমি অফিসে রেকর্ড রুমের চাবি হাতে রেখে কাজ করছেন—এ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

উত্তর ধুরুং ভূমি অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তহসিলদারের কক্ষে তালা ঝুলছে, কিন্তু রেকর্ড রুম খোলা। সেখানে আলম নূর ও তার সহযোগী গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও খতিয়ান খুঁজে দেখছিলেন। চারপাশে সেবা নিতে আসা মানুষের ভিড়। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা দ্রুত সরে পড়েন। পরে আলম নূর সাংবাদিকদের ‘ম্যানেজ’ করতে গাড়ি ভাড়ার টাকার দেওয়ার প্রস্তাবেরও অভিযোগ ওঠে।

তহসিলদার আখতারুল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “আমি উখিয়া থেকে রওনা দিয়েছি, আগামীকাল অফিসে দেখা হবে।” এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাথোয়াইপ্রু মারমা বলেন, “তহসিলদার সেলিম কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাকে কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে।”

স্থানীয়দের দাবি, বর্তমানে রেকর্ড রুমের চাবি আলম নূরের কাছে থাকায় সরকারি নথি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। মূল ভলিউমে ঘষামাজা, খতিয়ান জালিয়াতি এবং রেকর্ড বিকৃতির অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। এতে নিরীহ মানুষের জমিজমা ও সম্পত্তি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। যদিও আলম নূর দাবি করেন, তিনি শুধু অনলাইনে খাজনা কাটেন, অন্য কোনও কাজ করেন না।

ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

Share This Article