নাটোরে ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর গুপ্ত হামলার অভিযোগ

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের ওপর কয়েকটি গুপ্ত হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই হামলাগুলো গত ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে। হামলায় আক্রান্ত তিনজন ভুক্তভোগী তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।

শাহরিয়ার তামিমের ওপর হামলা:
ঘটনা ঘটে ১৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৮টা ৪০ মিনিটের মধ্যে, নাটোরের ফায়ার সার্ভিস মোড় এলাকায়। শাহরিয়ার তামিম জানান, তিনি কানাইখালি থেকে মাদ্রাসা মোড়ের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তিনজন মাস্ক পরিহিত যুবক তাকে সাইডে ডেকে নেয় এবং অকস্মাৎ মারধর শুরু করে। তারা তাকে থাপ্পড় মেরে হুমকি দেয় এবং নাটোর ছেড়ে চলে যেতে বলে। এক পর্যায়ে একজন চাকু বের করলে তামিম প্রাণ ভয়ে দৌড়ে ফায়ার সার্ভিস গেটের দিকে চলে যান। হামলাকারীরা বাবুর পুকুরপাড় রাস্তায় পালিয়ে যায়। তামিম জানান, এর আগে তার কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিল না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকে এ ধরনের হুমকিতে তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।

প্রান্তর ওপর হামলা:
২০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৮টা ৪০ মিনিটের মধ্যে নাটোর রেল স্টেশন প্ল্যাটফর্মের পাশে এই ঘটনা ঘটে। প্রান্ত জানান, তিনি স্টেশন থেকে উত্তর দিকের রেল গেটের মাঝে ফাঁকা জায়গায় হাঁটছিলেন। সেসময় ছয়জন যুবক তাকে ঘিরে ফেলে এবং গালিগালাজ করতে শুরু করে। একজন কলার ধরে মারার চেষ্টা করে। তবে হঠাৎ কয়েকজন পথচারী আসায় তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। প্রান্ত আরও জানান, চারজনের মুখ মাস্কে ঢাকা থাকলেও দুইজনের মুখ খোলা ছিল, তবে তিনি কাউকে চিনতে পারেননি।

জাকিরের ওপর হামলা:
২০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে দীঘাপতিয়া নৌকা চত্বরে এই ঘটনা ঘটে। জাকির জানান, তিনি নাটোর শহর থেকে দীঘাপতিয়া নিজ বাড়িতে রিকশায় ফিরছিলেন। সেসময় পাঁচ-ছয়জন মাস্ক পরিহিত যুবক তার রিকশার গতি রোধ করে। সালাম দেওয়ার পর তারা তাকে বৈষম্যবিরোধী নেতা হিসেবে উল্লেখ করে গালমন্দ করতে থাকে এবং তাকে ডাল দিয়ে আঘাত করে। হামলায় জাকিরের হাত, মাথা ও কনুইয়ে আঘাত লাগে। কিছু সময় পর কয়েকটি অটোরিকশা সেখানে উপস্থিত হলে হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।

প্রত্যেকটি ঘটনায় মাস্ক পরিহিত ৫-৬ জন হামলাকারীর উপস্থিতি দেখা গেছে। হামলার সময় তারা আন্দোলনকেন্দ্রিক কথা বলেছে, যা থেকে অনুমান করা হচ্ছে যে হামলাগুলো আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, এসব হামলার মাধ্যমে তাদের ভয় দেখিয়ে মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা আরও বলেন, “আমাদের তটস্থ রাখতে এবং সক্রিয়তা দমিয়ে রেখে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য এই ধরনের গুপ্ত হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।”

এই হামলার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত তদন্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও আন্দোলনের নেতারা।

Share This Article