নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-যুবদল সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ২০

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের খালিয়ারচর পশ্চিমপাড়া গ্রামে শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অন্তত দেড় ঘণ্টা এই সংঘর্ষ চলে।

স্থানীয়রা জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মেঘনা নদী বেষ্টিত কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি কবির হোসেনের সঙ্গে ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ফকির জহিরুল ইসলামের অনুসারীদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।

গত বছরের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দু’পক্ষ এলাকায় প্রভাব ধরে রাখতে নতুন লোকজনকে দলে ভেড়াতে শুরু করেন। এ নিয়ে ‘ফ্যাসিস্টের দোসরদের পুনর্বাসন চলছে’ এমন অভিযোগ তুলে উভয়পক্ষের অনুসারিরা একাধিকবার বাকবিতণ্ডা এবং মারামারির ঘটনায় জড়িয়েছেন।

সম্প্রতি গ্রামের একটি হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করেও তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব আরও বৃদ্ধি পায়।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলেও জহিরুল ও কবিরের অনুসারীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয় যা শনিবার সকালে সংঘর্ষে রূপ নেয়। খালিয়ারচর পশ্চিমপাড়া গ্রামের ফকির বাড়ি জামে মসজিদের সামনে উভয় পক্ষের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র, টেঁটা, ও দেশীয় তৈরি বিভিন্ন ধরণের ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় বেশ কয়েকবার গুলির শব্দও পাওয়া যায়।

এমন পরিস্থিতিতে পুরো এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ও তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে খায়ের উদ্দিন (৪২), আব্দুল মতিন (৫০), জোনায়েত মিয়া (২৫), কালু মিয়া (৩৭), খলিলুর রহমান (৪০), আল আমিন (২৫), পশিদ মিয়া, (৫০), মনির হোসেন (৩৫), মজিবুর রহমান (৫০), সালাউদ্দিন মিয়া (৩৫), বিল্লাল হোসেন (৩৫), শুভ মিয়া (২৫), জুনায়েদুর রহমান জুনায়েত (২৫), রাজীব মিয়া (১৫), আহাদ মিয়া (১৮), তামিম মিয়া (১৪), আব্দুর রহিম (৪৫), আলমগীর হোসেন (৪২), স্বপন মিয়া (৪০), আমির আলী (৬০), জমির আলী (৫০), রাফি মিয়ার (২৪) নাম জানা গেছে।

আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ খায়ের, মতিন, জোনায়েত, কালু, খলিলুর ও আল আমিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে পুলিশ জানিয়েছে। অন্যরা আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সংঘর্ষের বিষয়ে বিএনপি নেতা ফকির জহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘হত্যা মামলার আসামিদের শেল্টার দিচ্ছেন কবিরের লোকজন। তারা মামলায় জামিন না নিয়েই এলাকায় ঘোরাফেরা করলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বাধা দেয়। এতে এলাকাবাসীর ওপর হামলা করে কবিরের লোকজন। এলাকাবাসী তখন তাদের প্রতিরোধ করে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কবির হোসেন বলেন, ‘বিনা উসকানিতে আমার অনুসারী লোকজনের ওপর হামলা করেছে জহিরুলের লোকজন। হামলায় আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।’

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) মেহেদী ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব বিরোধের জেরে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুপক্ষেরই ১৫ থেকে ২০ জন আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগ না দিলেও আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। সংঘর্ষে যদি কেউ আগ্নেয়াস্ত্র বা দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং আইনের আওতায় আনা হবে।’

Share This Article