ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। এরমধ্যে গতবছরের অক্টোবরে প্রথম ধাপে গঠিত ছয়টি কমিশনের পাঁচটি তাদের প্রতিবেদনের কাজও প্রায় সম্পন্ন করেছে। তিন মাসের সময় দিয়ে গঠিত এই কমিশনগুলোর প্রতিবেদন গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই দেওয়ার কথা ছিল। নতুন করে সরকারের পক্ষ থেকে সময় বাড়িয়ে আগামী ১৫ জানুয়ারি করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি কমিশনের প্রতিবেদনের জন্য ৩১ জানুয়ারি তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে জাতীয় সংসদে দুই কক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উঠে এসেছে। এরমধ্যে নিম্ন কক্ষে সাধারণ পদ্ধতিতে নির্বাচন ও উচ্চকক্ষে আনুপাতিক হারে নির্বাচনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যদিও বিএনপিসহ যুগপতে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইলেও সিপিবি-বাসদ, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ আরও কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে সাধারণ নির্বাচন আনুপাতিক হারে করার দাবি জানানো হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় ধাপে গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী ও স্থানীয় সরকারব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির জন্য আরও পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে এই কমিশনগুলো তাদের প্রতিবেদন দেবে।
কমিশনগুলোর সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, প্রথম ধাপে গঠিত জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব তৈরির কাজ প্রায় সম্পন্ন। এরমধ্যে পাচটি কমিশন আগামী ১৫ জানুয়ারি প্রতিবেদন দেবে। একটি দেবে এই মাসের শেষদিকে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সূত্র জানায়, ৭ জানুয়ারি কমিশন প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করলেও সরকারের পরামর্শে তারিখ পেছানো হয়েছে। প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, পর-পর একই ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারা, ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনী প্রসঙ্গগুলো।
সংবিধান কমিশনসূত্র জানায়, সংবিধান সংস্কার প্রণয়নে কমিশন অন্তত ৫৪ হাজার প্রস্তাব পেয়েছে। অনলাইনে এসেছে কয়েক হাজার প্রস্তাব। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস এর মাধ্যমে করা একটি সার্ভেও করেছে কমিশন। পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করলেও কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কমিশনের একাধিক সদস্য উদ্ধৃত হতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের একাধিক সদস্য মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে কমিশনগুলোর প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার পক্ষে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে গঠিত প্রথম ছয়টি কমিশনের প্রধানদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি ঐক্য কমিশনও হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আলাপ-আলোচনার জন্য এই কমিশন সরকারের সঙ্গে কাজ করবে।
জানতে চাইলে রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী ১৫ জানুয়ারি পাঁচটি কমিশন প্রতিবেদন দেবো। এর বাইরে আর কিছু বলতে চাই না।’
সদ্য বিগত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত কিছু অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, কমিশনের পক্ষ থেকে কাঠামোগত পরিবর্তনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন একই দিনে করা যায় কিনা, সেটি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলেও তিনি গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।
আর দ্বিতীয় ধাপে গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক ও স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় সংস্কারের প্রস্তাব তৈরির জন্য আরও পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে এই কমিশনগুলোর প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য, বাম রাজনীতিক রাজেকুজ্জামান রতন রবিবার হকারদের এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাংলাদেশের যত পেশা আছে, আমরা সব পেশার নাম আমরা আমাদের রিপোর্টে রাখতে চাই। যাতে মানুষ বলতে পারে, শ্রম সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে তাদের কথা কমিশন উল্ল্যেখ করেছে। সরকার যাদের চাকরির ব্যবস্থা সরকার করতে পারেনি, যারা নিজের চেষ্টায় করেছে কর্মসংস্থান, সরককারকে নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছে, কেন তাদের কোনও পরিচয়পত্র থাকবে না, এই নিয়ে অবশ্যই কমিশন সুপারিশ করবে।’
হকারদের ওই অনুষ্ঠানে তাদের পেশার প্রসঙ্গ টেনে তিনি উল্লেখ করেন, সুপারিশের শুরুতে একইসঙ্গে প্রস্তাবনা দেবো, কেন এই পেশা প্রয়োজন এবং কেন সকলের আইনি সুরক্ষার প্রয়োজন।