আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড্রোনব্যবহার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনেআইনশৃঙ্খলা ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ইসির আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভার কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় ও প্রস্তুতিমূলক সভায় তুলে ধরা এক কার্যপত্রে এই তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ড্রোন একটি আধুনিক প্রযুক্তি হলেও নির্বাচনকালীন সময়ে এর ব্যবহার নানা ধরনের ঝুঁকিও অসুবিধা তৈরি করতে পারে। ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার চারটি প্রধান কারণ হিসেবে এতে উল্লেখ করা হয়–– গোপনীয়তা লঙ্ঘন, নিরাপত্তার ঝুঁকি, আইন ও বিধি লঙ্ঘন এবং ব্যক্তিগত তথ্য চুরি।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয় এভাবে- ড্রোন ব্যবহার করে ভোটারদের ব্যক্তিগত স্থান, অফিস, কিংবা ভোটকক্ষ পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব যা ভোটের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারকে লঙ্ঘন করতে পারে। অননুমোদিত ড্রোন ব্যবহার করে বিপজ্জনক বস্তুবা বিস্ফোরক বহন করা সম্ভব যা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও জনসমাগমের ওপর হামলার ঝুঁকি তৈরি করে।
ড্রোন পরিচালনায় কিছু আইনগত নিয়ম রয়েছে, কিন্তু অনেকেই তা অনুসরণ করেনা। ফলে নির্বাচনি এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে ড্রোন উড্ডয়ন আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হতে পারে। এছাড়া ড্রোনের মাধ্যমে ভোটদানের ছবি বা ভিডিও ধারণ করে তা অপব্যবহার করার সম্ভাবনা থাকে যা নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে পারে।
তফসিল ঘোষণার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাতে নির্বাচনপূর্ব পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকে। অপরাধী ও দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারএবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচন পর্যন্ত এই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই সর্বাধিক গুরুত্ব পায় যাতে প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালাতে পারে এবং ভোটাররা নিরাপদে ভোট দিতে পারে।
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আমর্ড পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে এবং ভোটগ্রহণ শেষে সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা রোধে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে বলেও জানানো হয়। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচনি তদন্ত কমিটি সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
ইসি জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম ইতোমধ্যেই অগ্রসর পর্যায়ে রয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, ভোটারতালিকার সিডি প্রস্তুত, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে।
তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, নির্বাচনকালীন সময়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় চার নির্বাচন কমিশনার এবং পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
