
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ১৫০ সদস্যের একটি বড় দল বাংলাদেশে পাঠাতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইইউর সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
একই দিনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সে বিষয়ে যুক্তরাজ্য সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সারাহ কুক বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আজ অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিভিন্নভাবে সহায়তা করার অঙ্গীকার আমরা পুনর্ব্যক্ত করেছি।’
যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন যেন আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে অনুষ্ঠিত হয়, সে বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় এ দুই বিষয়—নাগরিক শিক্ষা ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ—গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে।’
আসন্ন নির্বাচন ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক ঘোষণা প্রসঙ্গেও যুক্তরাজ্যের অবস্থান তুলে ধরেন সারাহ কুক। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে গৃহীত এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।’
অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন যুক্তরাজ্যের সহায়তার প্রশংসা করেন এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সব পক্ষের আস্থা অর্জনের জন্য কমিশন কাজ করছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আগামী নির্বাচনকে সর্বজনগ্রাহ্য করে তুলতে। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগিতা আমাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।’
অন্যদিকে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে পর্যবেক্ষক মিশন বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যবেক্ষক দল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আসবে এবং পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চলবে।’
ইসি সচিব আরো জানান, ইইউ প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশন থেকে কয়েকটি বিষয়ে স্পষ্টীকরণ চেয়েছে। বিশেষ করে তারা ভোট কেন্দ্রে প্রবেশাধিকার, ভোটারদের গোপন কক্ষে প্রবেশের সুযোগ, ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার নিয়মাবলি ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। সচিব বলেন, ‘পর্যবেক্ষকরা একসঙ্গে ১৫০ জন আসবেন না, বরং বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে ধাপে ধাপে বাংলাদেশে আসবেন। তাদের আগমন, বিস্তারিত তথ্য, ভিসা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সব কিছু যথাযথভাবে সমন্বয় করা হবে।’
তিনি জানান, প্রতিনিধি দল এরই মধ্যে রংপুর ও চট্টগ্রামে গিয়ে ইসির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছে এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। বৈঠক শেষে তারা একটি খসড়া প্রস্তাব ইসির কাছে রেখেছেন। ইসি সেটি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সমঝোতা স্মারকে সই করার জন্য প্রস্তুত করবে। প্রয়োজনে পর্যবেক্ষণ বা সংশোধনমূলক পরামর্শ জানানো হবে। তারা আগামীকাল দেশে ফিরবেন। এরপর আমাদের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাঠাবেন। আমরা খসড়া প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সমঝোতা স্মারকে এগোব।’