
নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বানিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে কয়েকটি স্থায়ী ও অস্থায়ী পূজা মন্ডপে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় হামলাকারীদের আক্রমণে ২ জন নিহত ও মারাত্মক ভাবে শতাধিক আহত হয়েছেন।
চৌমুহনীর বিজয়া পূজা মণ্ডপে দুর্বৃত্তদের হামলার সময় যতন সাহা (৪২) ও প্রান্ত দাশ (২৪) নামের দুইজন মারা গেছেন।
হামলায় আহতরা হলেন, একই উপজেলার চৌমুহনী কলেজ রোডের পোড়া বাড়ির দ্বিজেন্দ্র কুমার দে এর ছেলে শিশির কুমার দে, একলাশপুর ইউনিয়নের দুলাল চন্দ্র দাসের ছেলে পলাশ চন্দ্র দাস, গনিপুর ইউনিয়নের সুনিল চন্দ্র সাহার ছেলে সুবীর চন্দ্র সাহা এবং গোপাল চন্দ্র সাহার ছেলে পাপন চন্দ্র সাহা ও মৃত মরন চন্দ্র মজুমদারের ছেলে চিত্ত রনজন মজুমদার সহ আরো বেশ কয়েকজন।
শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর চৌমুহনী পোড়া বাড়ির শ্যামা কালী মন্দির, ইসকন মন্দির, রাধা মাধব আখড়া মন্দির, রাম ঠাকুর আশ্রমের পূজা মন্ডপ সহ আরো কয়েকটি ছোট মন্দিরেও এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার খবর পেয়ে দ্রুত সময়ে র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে।
পোড়া বাড়ির শ্যামা কালী মন্দিরের সভাপতি তপন চন্দ্র মজুমদার বলেন, শতাধিক ব্যক্তি এ হামলায় অংশ নেয়। অতর্কিত ভাবে এসে এলোপাতাড়ি কিল ঘুসি সহ লাঠিসোঁটা ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। এতে আমাদের পুরোহিত সহ অনেকেই মারাত্মক জখম হয়। এরপর ঘটনাস্থলেই এক জনের মৃত্যু হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু ঘটে। এইছাড়াও হামলায় আহতরা বেশ কয়েকজন এলাকার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা চৌমুহনী কয়েকটি বাই সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভ করে।
স্থানীয় ও সরেজমিনে গেলে জানা যায়, চৌমুহনী পৌরসভার এলাকায় শত থেকে অর্ধশত বছরের পুরোনো এইসব মন্দির। এইসব মন্দিরে পূজা মণ্ডপে দূর্গাপুজা, কালীপূজা, সরস্বতী পূজা, বিশ্বকর্মা পূজা বেশি হয়। পূজা মণ্ডপ সংলগ্ন এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস।
তিনি আরো বলেন, কুমিল্লায় পুজামন্ডপের হামলার ঘটনার জের ধরে এইসব মণ্ডপে পূজা হলেই স্থানীয় কিছু বাসিন্দা হিন্দু ধর্ম নিয়ে মতবাদ তৈরি করেন। শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় পূজা মণ্ডপে পূজার কাজ চলছিলো।
নামাজের পর থেকে চৌমুহনীর পূজামণ্ডপ এবং মন্দির গুলোকে লক্ষ্য করে একের পর এক আক্রমণ চালানো হয়। ভেতরে ঢুকে তারা পুরো মন্দিরটিতে এলোপাথাড়িভাবে ভাঙচুর চালাতে থাকে। একপর্যায়ে তাঁরা বিভিন্ন মন্দির, বাসাবাড়ি সহ দোকানপাটে হামলা চালায়। রাম ঠাকুর আশ্রমের সামনে দুটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
চৌমুহনী শহরের বিভিন্ন পাড়ায় দুর্গা পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা জানালেন, কলেজ রোডে ছয়টি মন্দিরের সবক’টিতেই হামলা হয়েছে। আটটি অস্থায়ী পূজা মণ্ডপের মধ্যে পাঁচটিতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এছাড়াও হামলা চালানো হয় হিন্দুদের বাড়িঘর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
ওই সুযোগে স্থানীয় কয়েকজনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক পূজা মণ্ডপে হামলা চালায়। হামলায় বেশ কয়েকজন মারাত্মক ভাবে পুরুষ এবং মহিলা অনেকেই আহত হন। এছাড়া একটি দূর্গা প্রতিমা সহ অনেক গুলো প্রতিমা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। একটি নির্মাণাধীন প্যান্ডেল ভাঙচুর করে একটি প্রণামি বক্স ও প্রতিমার সরঞ্জামাদি সহ টাকাপয়সা এবং স্বর্নালংকার লুট করে নিয়ে যায় তারা।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জেলা আহ্বায়ক বিনয় কিশোর রায় বলেন, বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই হামলা-ভাঙচুরের তাণ্ডব চালায়।
হামলায় জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, বেগমগঞ্জ মডের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান শিকদার, কনেস্টেবল শাহাদাত হোসেন, কামরুল হাসান, রাকেশ দেবনাথসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
বেগমগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়াকে কেন্দ্র করে সহিংসতার দু’দিন পর ১৫ই অক্টোবর চৌমুহনীর মণ্ডপ আর মন্দির গুলোতে হামলা হয়েছে। তাই হিন্দু ধর্ম ও মুসলিম ধর্ম নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।
ওসি আনোয়ারুল ইসলাম আরো জানায়, এ ঘটনায় পূজার প্যান্ডেলে হামলা ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা নেয়া হয়েছে। ওই মামলায় এজাহারনামীয় আসামি অর্ধ শতাধিক এবং অজ্ঞাত আসামি আরো দুই শতাধিক রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) শাহ এমরান
জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।