পরিবেশবান্ধব পর্যটনে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আগ্রহী শ্রীলঙ্কা

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

দুই দেশের অর্থনীতিতে পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করে সবুজ পর্যটনের উন্নয়নে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। চা ও বৌদ্ধ পর্যটন সার্কিটসহ যৌথ পর্যটন উদ্যোগ উন্নয়ন এবং পর্যটন সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) কলম্বোতে দুদেশের পররাষ্ট্র সচিবদের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মধ্যে চতুর্থ পর্বের পররাষ্ট্র দফতরের পরামর্শক সভায় (এফওসি) এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব অরুণী রানারাজা। প্রায় ৮ বছর পর এই সভা অনুষ্ঠিত হয়, এর আগে ২০১৭ সালে তৃতীয় পর্বের সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দুদেশের যৌথ বিবৃতিতে একথা জানানো হয়।

শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দফতরের এই আলোচনা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সব দিক এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় পর্যালোচনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে। আলোচনায় কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ, পর্যটন, মৎস্য চাষ, যুব বিষয়ক, সংস্কৃতি এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার বিপুল বিনিয়োগ ও প্রবাসী উপস্থিতির কথা তুলে ধরে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের শ্রীলঙ্কার উন্নয়ন প্রকল্প, লজিস্টিক সেবা, চাষাবাদ এবং পর্যটন সম্পর্কিত ব্যবসায় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে। আর্থিক স্থিতিশীলতা ও আর্থিক কল্যাণে অবদান রাখতে ব্যাংকিং পরিষেবায় সহযোগিতা সম্প্রসারণের সুযোগ-সুবিধা নিয়েও আলোচনা হয়। 
শ্রীলঙ্কার বিদ্যমান বিনিয়োগের প্রশংসা করে বাংলাদেশ তার ইপিজেড, এসইজেড এবং এপিআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যালস, হসপিটালিটি, পর্যটন, অটোমোবাইল এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, আইসিটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, চামড়া এবং জুতোসহ উচ্চ-সম্ভাবনাময় খাতে শ্রীলঙ্কা থেকে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে।

২০২২ সালে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সময় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের প্রদত্ত সহায়তার প্রশংসা করেছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্যের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সহজতর করার অনুরোধ জানিয়েছে। উভয় পক্ষই বাণিজ্য সহজতর করার জন্য একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে এবং বাণিজ্য ও জাহাজ চলাচল সম্পর্কিত যৌথ ওয়ার্ক গ্রুপের বৈঠক দ্রুত আহ্বান করতে সম্মত হয়েছে। গভীর অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য উভয় পক্ষই বেসরকারি খাত এবং তাদের চেম্বারগুলোর মধ্যে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য উভয় পক্ষই বকেয়া সমস্ত আইনি চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। যোগাযোগের গুরুত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে উভয় পক্ষ চট্টগ্রাম ও কলম্বোর মধ্যে বন্দর যোগাযোগ স্থাপনের সম্ভাবনার সঙ্গে নৌপরিবহন খাতকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা অন্বেষণ করেছে।

উভয় পক্ষই কৃষি ও মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের সুযোগের কথা স্বীকার করেছে। জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার এবং জ্ঞান ও বিশেষজ্ঞ বিনিময়ের মাধ্যমে মিঠা পানির মাছ চাষের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার কৃষকদের বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানায়, প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতার প্রস্তাব দেয় এবং গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার দক্ষতা অর্জনের আগ্রহ প্রকাশ করে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা নিয়ে আরও আলোচনা হয় সভায়। শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশি নার্সদের প্রশিক্ষণের জন্য বার্ষিক স্লটের সংখ্যা বাড়ানোর শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। উভয় পক্ষই যুব উন্নয়নকে জোরদার করতে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। অ্যাথলেটিক্স, ক্রীড়া বিজ্ঞান ও ক্রিকেট বিষয়ে ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।

উভয় পক্ষ দুটি জাতীয় সংবাদ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে। ডিজিটাল উদ্ভাবনে সহযোগিতা জোরদার করতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেক করিডোর তৈরির প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা আঞ্চলিক সহযোগিতা বিশেষ করে সার্ক, বিমসটেক এবং আইওআরএ’র মাধ্যমে জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এবং তাদের টেকসই জীবিকা, অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে শ্রীলঙ্কার সমর্থন কামনা করেছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আল সিয়াম শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী ড. হরিণী আমরসুরিয়া এবং পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপমন্ত্রী অরুণ হেমচন্দ্রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব আগামী বছর পররাষ্ট্র দফতরের পরামর্শের পঞ্চম দফায় ঢাকায় আসার জন্য শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র সচিবকে আমন্ত্রণ জানান।

প্রতিনিধি দলে শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র, নৌপরিবহন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং কলম্বোস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি দলে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার ধর্মপালা বীরাক্কোডি, দক্ষিণ এশিয়া ও সার্ক বিভাগের মহানির্দেশক সামান্থা পাথিরানা এবং বিদেশ মন্ত্রক, বিদেশ কর্মসংস্থান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

Share This Article