ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে রোববার (২৬ মে) রাত থেকে টানা বর্ষণে পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছে চট্টগ্রাম নগরী। সোমবার (২৭ মে) দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিগত ১২ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২৩৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। এদিকে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রাম নগরীর নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর প্রধান সড়কও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে বিপাকে পড়েছেন কর্মক্ষেত্রে যাওয়া সাধারণ মানুষেরা। তবে রেমালের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না থাকায় বেশ কিছু স্কুল খোলা থাকায় জটিলতা আরো বেড়েছে।
সোমবার দুপুর পর্যন্ত বিগত ১২ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২৩৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রতি ৩ ঘণ্টা পরপর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়। আজ সারা দিন ও আগামীকালও সারা দিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে এ কর্মকর্তা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর চকবাজার, কাপাসগোলা, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, প্রবর্তক মোড়, ওয়াসার মোড়, তিন পোলের মাথা, মেহেদীবাগ, সিডিএ কলোনি, আগ্রাবাদ, হালিশহর, হালিশহর সংলগ্ন বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, বায়োজিদ, জিইসি, মাদারবাড়ি, সিডিএ আবাসিক, কাতালগঞ্জ, ডিসি রোড, বাকলিয়া, বড়পোল, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া নগরীর উপকূলীয় এলাকা পতেঙ্গার আকমল আলী রোড সংলগ্ন জেলেপাড়া, খেজুরতলা, রানী রাসমনি ঘাটের জেলেপাড়া, উত্তর কাট্টলী এলাকাও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে মূল সড়ক ও নিচু এলাকায় ছাড়াও প্রচণ্ড পানির চাপে বিভিন্ন উঁচু এলাকার অলিগলি ও কোমরপানিতে ডুবে গেছে। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার নিচতলার বাসিন্দারা। বাসা-বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ায় বিপাকে আছেন তারাও। এদিকে সড়কে পানি উঠে আসায় যানবাহন চলাচলেও সমস্যা তৈরি হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরী ও উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ী এলাকার মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। অনেক পাহাড়ের ওপর বসবাসকারীদের রোববার বিকাল থেকেই সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। এমনকি রোববার রাতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান নিজেই নগরীর আকমল আলী ঘাট, রাসমনি ঘাট, ১ নম্বর ঝিল সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে অবস্থানকারীদের নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ জানান।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, আমি যারা উপকূল এলাকা আর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবস্থান করছে তাদের অন্যত্র সরে যেতে অনুরোধ করেছি। আমি বলার সঙ্গে অনেকেই নিরাপদ দূরত্বে চলে গেছেন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে জেলা, উপজেলা ও নগরীতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা, খাবার, সুপেয় পানি ও ঔষধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে অনেকগুলো মেডিকেল টিম কাজ করছে। ভলান্টিয়াররা মানুষের কাছে কাছে গিয়ে তাদের নিরাপদে রাখার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন জায়গাও প্লাবিত হয়েছে। সীতাকুণ্ড, রাউজান, লোহাগাড়া ও ফটিকছড়ি উপজেলার ছাড়াও অন্যান্য বেশকিছু এলাকাতেও বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।