রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের এখন থেকে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে উৎসাহ বোনাস দিতে হবে। এভাবে বছরে সর্বোচ্চ তিনটি বোনাস দেওয়া যাবে। বোনাস দেওয়ার ভিত্তি আর পরিচালন মুনাফা হবে না, হবে নিট মুনাফা। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের কর্মচারীদের উৎসাহ বোনাস দেওয়ার বিষয়ে এসব শর্ত যুক্ত করে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টম্বর) এ নির্দেশকা জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তার বলেন, এ নির্দেশনার পর ঢালাওভাবে কর্মচারীদের আর উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণ ও অগ্রিমের ওপর প্রভিশন, বিনিয়োগের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভিশন এবং অন্যান্য সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভিশন সমন্বয় করে অর্থাৎ বাদ দিয়ে নিট মুনাফার হিসাব করতে হবে। ব্যাংকগুলোতে উৎসাহ বোনাস দেওয়ার ক্ষেত্রে এত দিন শৃঙ্খলার ঘাটতি ছিল। এটা দূর করার জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই এ অভিন্ন উৎসাহ বোনাস নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এত দিন এ বিষয়ে একটি নীতিমালা ছিল, যা লঙ্ঘন করে আসছিল বড় কয়েকটি ব্যাংক। যেমন তিনটি উৎসাহ বোনাসের বেশি পাওয়ার সুযোগ না থাকলেও ২০২৩ সালে পাঁচটি উৎসাহ বোনাস দেয় সোনালী ব্যাংক। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত ২৭ মার্চ সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) চিঠি দিয়ে দুটি বোনাসের অর্থ ব্যাংকের কর্মচারীদের কাছ থেকে ফেরত আনার নির্দেশ দেয়।
সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এ টাকা ফেরত দেননি কেউই। একইভাবে অন্যান্য ব্যাংকও বেশি বোনাস দিয়েছে।
নিদের্শিকায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল—এই ছয় ব্যাংক উৎসাহ বোনাস দেবে পাঁচটি উপাদান বা কর্মসম্পাদন পরিমাপকের ভিত্তিতে। এগুলো হচ্ছে চলতি মূলধনের ওপর নিট মুনাফার হার, আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধির হার, ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ বৃদ্ধির হার, খেলাপি ঋণ আদায়ের হার এবং অবলোপন করা ঋণ আদায়ের হার। একই পদ্ধতিতে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের বোনাস নির্ধারিত হবে।
এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ক্ষেত্রেও পাঁচটি সূচক বিবেচনায় থাকলেও কিছুটা পরিবর্তন রয়েছে। এক্ষেত্রে চলতি মূলধনের ওপর নিট মুনাফার হার, বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশ ও মুলধনী মুনাফা অর্জনের হার, খেলাপি ঋণ আদায়ের হার, পুঁজিবাজারে সংস্থাটির লেনদেন বৃদ্ধির হার এবং অবলোপন করা ঋণ আদায়ের হার বিবেচনায় নেওয়া হবে। আর বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) ক্ষেত্রে চলতি মূলধনের ওপর নিট মুনাফার হার, আদায়যোগ্য ঋণের মধ্যে বাৎসরিক প্রকৃত আদায় হার এবং ঋণ ও বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধির হার বিবেচনায় নেওয়া হবে।
এভাবে মূল্যায়নের ভিত্তিতে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৪০ নিচে পেলে কোনও বোনাস দেওয়া যাবে না। ৪০ থেকে ৫০ নম্বরের ক্ষেত্রে একটি, ৫০ থেকে ৬০ নম্বরে দেড়টি, ৬০ থেকে ৭০ নম্বরে দুটি, ৭০ থেকে ৮০ নম্বরে আড়াইটি এবং ৮০’র বেশি নম্বর পেলে ৩টি বোনাস দেওয়া যাবে। একটি বোনাস বলতে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ বোঝাবে। হিসাব বছরের শেষ মাসের প্রাপ্য মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ উৎসাহ বোনাসের ভিত্তি হিসেবে গণ্য হবে।
এ নির্দেশিকার আলোকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে উৎসাহ বোনাস প্রদান করবে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ নির্দেশিকার আলোকে নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশের ভিত্তিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমোদন নিয়ে উৎসাহ বোনাস প্রদান করবে। নির্দেশিকায় বর্ণিত শর্তাদি অনুযায়ী কোনও বছরে উৎসাহ বোনাস প্রাপ্য না হলে, বিবেচ্য বছরে প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কোনও অর্জন বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশের ভিত্তিতে আবেদন করলে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ এক্স-গ্রেসিয়া হিসেবে প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবে।