
রাজধানীর লালমাটিয়ায় ‘মব’ সৃষ্টি করে প্রকাশ্যে পুলিশ পিটিয়ে জুলাই আন্দোলনের ছাত্র হত্যার পাঁচ মামলার আসামি কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম মোস্তফাকে ছিনিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগেরই আরেক নেতা আনিসুর রহমান সোহাগ। তার বিরুদ্ধেও জুলাই আন্দোলনের ১১টি হত্যা ও হত্যা চেষ্টা মামলা রয়েছে।
আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার এ মিশন বাস্তবায়নে সোহাগকে সহায়তা করেন দুই সহযোগী- আরিফুল হাসান মীর সাগর ও সোহেল শাহরিয়ার। আর পুরো মিশন বাস্তবায়নে ১৭ জন সরাসরি হামলায় নেতৃত্ব দেন। পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফাসহ অন্যরা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে লক্ষে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া মামলার অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই মো. শাহদাত হোসেন। এর আগে গত ১২ মার্চ মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকার বি-ব্লকের একটি সড়ক থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় সরকারী কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গোলাম মোস্তফাকে এক নম্বর আসামি করে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
মামলার তদন্ত শেষে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত মোট ১৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, গোলাম মোস্তফা, আনিসুর রহমান সোহাগ, আরিফুল হাসান মীর সাগর, সোহেল শাহরিয়ার, দেলোয়ার হোসেন মন্ডল, আব্দুল্লাহ শেখ, সাইফুজ্জামান শোভন, রাজিব শিকদার, আসলাম শিকদার, রাকিব ঠাকুর, হাসানাত সরদার ওরফে হাসান, মেহেদী হাসান সাব্বির, জহিরুল ইসলাম, আরিফিন আলম ওরফে ইমন, আসাদুজ্জামান আসাদ, সানিয়াত সরদার ও হাসিব মুন্সী।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. শাহদাত হোসেন বলেন, অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আসামিরা সরকারী কাজে বাধা দিয়েছে এবং পুলিশের উপর হামলা কওে আহত করেছে। এগুলো ভিডিও ফুটেজে প্রমাণ আছে। কাউকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি বলেও তিনি জানান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দেওয়া লালমাটিয়ার অ্যাভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ ও আওয়ামীলীগ নেতা আনিসুর রহমান সোহাগের বিরুদ্ধে জাল সনদে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অধ্যক্ষ বনে যাওয়া, প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসায়িক অংশীদারদের ঠকানো, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস হাফিজুর রহমান লিকুর সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্বে থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের হত্যা ও হত্যা চেষ্টার ১১টি মামলা রয়েছে।
আদালতে দেওয়া চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার সময় এ্যাভেরোজ স্কুলের দ্বিতীয় তলায় অফিস কক্ষে অবস্থান করছিলেন আনিসুর রহমান সোহাগ, আরিফুল হাসান মীর সাগর ও সোহেল শাহরিয়ার। তারা নিচে নেমে হুকুম দিয়ে হামলার নেতৃত্ব দেন। এতে মোহাম্মদপুর থানার এসআই মো. শহিদুল আহত হয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে আসামিরা দেশ ত্যাগের চেষ্টা করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ইমিগ্রেশন শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।