
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আসিফুর রহমান থাকেন রাজধানীর কল্যাণপুরে। ১৫ দিন আগে স্থানীয় একটি কাঁচাবাজার থেকে তিনি চার কেজি পেঁয়াজ কিনেছিলেন ৯০ টাকা কেজি দরে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আবার পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দেখেন, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আসিফুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম এতটা বেড়ে গেল। পাঁচটি দোকান ঘুরে দেখলাম, কোথাও ভালো মানের পেঁয়াজ ১২০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না।’
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। এতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজারে এ দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। বাজারে পেঁয়াজের পাশাপাশি কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে আলুর দাম। প্রতি কেজি আলু এখন ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের মজুত শেষের দিকে। ফলে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজেরও সরবরাহ নেই। এ কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। সরবরাহ-ঘাটতির কারণে প্রতিবছর এ সময় পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।
বর্তমানে খুচরা বাজারে ছোট আকারের মানিকগঞ্জ ও ফরিদপুর অঞ্চলের প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাবনা জেলার ভালো মানের পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে মানিকগঞ্জ ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং পাবনার পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল।
গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার, আগারগাঁও তালতলা বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি বছর খুব বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। ফলে দেশি পেঁয়াজের ওপরই নির্ভরশীল ছিল বাজার। গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত বাজারে দেশি পেঁয়াজের ভালো সরবরাহও ছিল। কিন্তু নভেম্বরের শুরু থেকে সরবরাহে টান লাগে। ফলে পেঁয়াজের দাম দ্রুত বেড়ে যায়।
বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেই। আবার দেশীয়পেঁয়াজেরও সরবরাহে ঘাটতি আছে। এ অবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা সরকারের কাছে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়েছি; কিন্তু এখনো পাইনি।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক আবদুল মাজেদ
সাধারণত ডিসেম্বর মাসে বাজারে নতুন মৌসুমের আগাম পেঁয়াজ তথা মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে শুরু করে। এর আগে সরবরাহ কমে যাওয়ায় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বাজারে পেঁয়াজের দাম চড়া থাকে। গত বছরও এ সময় পেঁয়াজের দাম চড়া ছিল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, আগামী ডিসেম্বরে বাজারে আগাম পেঁয়াজ আসা শুরু হতে পারে। তখন দাম কমবে। এর আগপর্যন্ত, বিশেষ করে নভেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে।
রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক আবদুল মাজেদ বলেন, ‘বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেই। আবার দেশীয় পেঁয়াজেরও সরবরাহে ঘাটতি আছে। এ অবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা সরকারের কাছে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি চেয়েছি; কিন্তু এখনো পাইনি।’
কমেছে মোটা চাল ও ডিমের দাম
বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম ও মোটা চালের দাম কিছুটা কমেছে। গতকাল বাজারে এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগে প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১৩০-১৪০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, ভারত থেকে স্বর্ণা (মোটা) ও পাইজাম চাল আমদানি হওয়ায় বাজারে এসব চালের দাম কিছুটা কমেছে। যেমন আমদানি করা প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে স্বর্ণা (দেশি) চালের কেজি ছিল ৫৫ টাকা। আবার পাইজাম চালের দাম কেজিতে ৫ টাকা কমে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মিনিকেট চালের দাম আগের মতোই রয়েছে।
এদিকে বাজারে শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। ফলে সার্বিকভাবে সবজির দাম এখন কমতির দিকে। মৌসুমি সবজির মধ্যে বর্তমানে প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০-৬০ টাকা, লাউ ৬০-৮০ টাকা এবং প্রতি কেজি টমেটো ১২০–১৪০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, বেগুন ৮০-১২০ টাকা ও করলা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে গতকাল ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল কম। গতকাল সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজারে খুব বেশি ক্রেতার দেখা পাওয়া যায়নি। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের সবজি বিক্রেতা আব্বাস আকন্দ জানান, সপ্তাহের অন্যান্য দিন সকালের তুলনায় গতকাল তাঁর দোকানে ক্রেতা ছিল প্রায় অর্ধেক। একই কথা জানিয়েছেন টাউন হল বাজারের মুদিদোকানি হুমায়ুন কবির।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের মাংস বিক্রেতা মো. পারভেজ বলেন, ‘শুধু আশপাশের এলাকা থেকে ক্রেতারা আসছেন। দূরের ক্রেতারা আজ (গতকাল) খুব কম এসেছেন। আমাদের বেচাকেনাও এ জন্য স্বাভাবিকের তুলনায় কম।’