ইতালি সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা করছে। কারণ সমুদ্রপথে ইতালিতে প্রবেশের শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি গত ৩০ আগস্ট ঢাকা সফরের কথা থাকলেও তা বাতিল হয়। তার সফরে ইতালিতে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে আলোচনায় গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল। তবে এই আলোচনা এবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের ইতালি সফরে হবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। কারণ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কিছুদিন আগেই বৈঠক হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। এবার আলোচনা হলে ইতালিতে ভিসা নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টিও সামনে আসতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস রবিবার (১২ অক্টোবর) ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টে যোগ দিতে রোমের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আগামী ১৩ অক্টোবর তিনি সেখানে বক্তব্য রাখবেন। ফোরামের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে। তবে বৈঠকের সময় এখনও নির্ধারিত হয়নি বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। আগামী ১৫ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা আছে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের এজেন্ডায় অভিবাসন ইস্যু গুরুত্ব পেতে পারে। এছাড়া ভিসা একটা ইস্যু আছে। এর পাশাপাশি বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সহায়তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। সর্বশেষ বৈঠকে দুই দেশের জন্য একটি বাণিজ্য ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী। সেটি নিয়েও অগ্রগতি হতে পারে। এছাড়া আগামী ডিসেম্বরে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা রয়েছে।’’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘‘ইতালির সঙ্গে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে এবং বৈধ অভিবাসন বাড়াতে একটা সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে গত মে মাসে। সেটা নিয়ে পরবর্তী আলোচনা গুরুত্ব পেতে পারে।’’
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ হাজার ১৪৮ জন বাংলাদেশি সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালি গেছেন, যা সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইতালি প্রবেশের ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ। এই সংখ্যা সমুদ্রপাড়ি দিয়ে ইতালি প্রবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের তালিকার শীর্ষে নিয়ে গেছে। তথ্য বলছে, এই তালিকায় বাংলাদেশিদের শীর্ষ অবস্থান বছরজুড়েই থাকে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় প্রধান উপদেষ্টার। বৈঠকে অভিবাসন ইস্যু মূল প্রাধান্য পায়। দুই নেতা অভিবাসন ইস্যুতে গভীর মতবিনিময় করেন, অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং অপরাধমূলক মানবপাচার নেটওয়ার্ক মোকাবিলায় প্রচেষ্টা জোরদার করার গুরুত্বের বিষয়ে একমত হন। বিশেষ করে, তারা বাংলাদেশিদের প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার উপায় এবং বৈধ অভিবাসনকে সমর্থন করার উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ইতালির উৎপাদনশীল ব্যবস্থার চাহিদা রয়েছে, এমন খাতে বিশেষায়িত শ্রমিকদের জন্য বাংলাদেশে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা।
প্রধান উপদেষ্টার ইতালি সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের অনিশ্চয়তা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘গাজা শান্তি পরিকল্পনা চুক্তি’ সই অনুষ্ঠানে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেওয়ার কথা আছে। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি মিশর যেতে পারেন। এ কারণে জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক এখনও প্রায় অনিশ্চিত।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে হাজার হাজার বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে ইতালিতে গিয়েছেন সুন্দরভাবে জীবন গড়ার আশায়। কিন্তু তাদের অনেকেই এখনও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে পারেননি। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, আবার কারও শিগগিরই শেষ হতে যাচ্ছে। দ্রুত সমাধান না হলে তারা বড় বিপদে পড়বেন। তাই প্রবাসীরা এই সমস্যার দ্রুত একটি সমাধান চান। অপরদিকে ইতালিতে কাজের আশায় ভিসার আবেদন করে বিপাকে আছেন অনেকে। অতিরিক্ত আবেদন জমা পড়ায় ভিসা পেতে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়েছে। সেটি নিয়েও সমাধান চান ইতালি গমনেচ্ছুরা।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘‘ভিসা প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ এবং ইতালি সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অনুগ্রহপূর্বক ধৈর্যধারণ করা অনিবার্য। এ প্রক্রিয়া একটি স্বতন্ত্র প্রশাসনিক পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, যার প্রতি আমাদের আস্থা রাখা প্রয়োজন।’’