প্রার্থীতা বাতিলের পরও সভা, কর্মীদের বাঁশের লাঠি নিয়ে প্রস্তুতির নির্দেশ

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন আহাম্মেদের আপন ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমানের একের পর এক আক্রমনাত্মক ও উস্কানীমূলক বক্তব্য মঠবাড়িয়াকে রণক্ষেত্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মঠবাড়িয়ার বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম শাহনেওয়াজ তাদের আপন বড় ভাই।

গত ১৩ মে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক দেয়ার পর ইসির আদেশ অমান্য করে উপজেলা শহরের মধ্যে লাঠির মাথায় আনারস নিয়ে রিয়াজ আহম্মেদের পক্ষে সমাবেশ করে আশরাফুর রহমান। এসময় আনারস মার্কার কর্মীদের সাড়ে তিন হাত বাঁশের লাঠি তৈরি করতে নির্দেশ দেন আশরাফ। তার উস্কানীমূলক বক্তব্য ও হুমকি দেয়ার ঘটনাটিকে আচরণ বিধি লঙ্ঘন হওয়ায় নির্বাচন কমিশন প্রথমে পিরোজপুরে সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে শুনানি হয়। শুনানিতে সন্তুষ্ট না হওয়ায় ২৩ মে বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াজকে ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ডাকা হয়। নির্বাচন কমিশন সেখানেও শুনানিতে সন্তুষ্ট না হওয়ায় বিষয়টিকে বড় ধরণের আচরনবিধি লঙ্ঘন ও অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে রিয়াজ উদ্দিনের প্রার্থীতা বাতিল করে।

তবে এরপরও থেমে থাকেনি চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন ও তার ভাই আশরাফুর রহমান। প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার পর প্রচারণা বন্ধ না করে উল্টা ঐদিন রাত নয়টার দিকে মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝেরপুল বাজারের মাঠে আনারস মার্কার পক্ষে বড় ধরণের সমাবেশ করেন প্রার্থীর ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান। এসময় তিনি বিরোধীপক্ষকে উদ্দেশ্য করে নানা ধরণের আপত্তিকর ও উস্কানীমূলক বক্তব্য দেন। যাতে পুরো মঠবাড়িয়ায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

বক্তব্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপশক্তি আখ্যা দিয়ে নেতাকর্মীদের বাঁশের লাঠি নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেন আশরাফুর রহমান। বাঁশের লাঠি নিয়ে মঠবাড়িয়াকে নতুন করে স্বাধীন করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন আশরাফ। এজন্য নেতাকর্মীদের গর্জে উঠতে বলেন।

নিজের বড় ভাই শামীম শাহনেওয়াকে মাত্র ১৫ দিনে কলার ছড়ি মার্কায় ৭ জানুয়ারি এমপি বানিয়েছেন জানিয়ে আশরাফুর রহমান দম্ভ করে বলেন, আমাদের এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান হতে বছরের পর লাগে না। ওদের দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে সবকিছু তছনছ করে দিবো।

নিজের ভাইয়ের প্রার্থীতা বাতিল করায় নির্বাচন কমিশনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে আশরাফ বলেন, টাকা দিয়ে (নির্বাচন কমিশন থেকে) সিগনেচার কেনা যায়। যেভাবেই হোক, আগামী ২৯ তারিখ রিয়াজ উদ্দিন আনারস মার্কায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে বলেও ঘোষণা দেয় আশরাফ।

এদিকে প্রার্থীতা বাতিল হলেও শুক্রবার সকালেও মঠবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা এবং বাজারে আনারস মার্কার প্রচারণা ও লিফলেট বিলি করতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভোট কেটে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছিলেন আশরাফুর রহমান। সদ্য জাতীয় নির্বাচনে তাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। পরে সমঝোতার ভিত্তিতে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বড়ভাইকে মাঠে নামেন আশরাফ। নিজের প্রভাবখাটিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তার ভাইকে এমপি বানান।

সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে ২৯ মে’র উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে মঠবাড়িয়ায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের শঙ্কা প্রকাশ করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

Share This Article