ফরিদপুরে বৃদ্ধকে জিহ্বা কাটার পর কুপিয়ে হত্যা

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ধার দেওয়া টাকা চাওয়ায় আব্দুল হালিম মোল্লা (৬১) নামের এক বৃদ্ধের জিহ্বা কেটে, কুপিয়ে জখম করে ফসলি ক্ষেতে ফেলে রেখা হয়। তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকালে মারা গেছেন।

নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ যাদের কাছে টাকা পেতো তারা টাকা না দিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পুলিশ বলছে, মৌখিকভাবে বিষয়টি জানতে পেরেছি, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহত হালিম মোল্লা জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পাড়াগ্রামের বাসিন্দা।

জানা যায়, আব্দুল হালিম মোল্লার বয়স ৬১ বছর। স্ত্রী মারা গেছেন দীর্ঘদিন আগে। একমাত্র মেয়ে তাকেও বিয়ে দিয়েছেন। বাড়িতে একাই বসবাস করতেন। ছেলে সন্তান না থাকায় নিজের ও বাবার সম্পত্তি ভাইদের ছেলেদের দিয়ে দিতে হবে, তাই কতিপয় ব্যক্তি তাকে পরামর্শ দেয় জমি বিক্রি করে আমাদের কাছে টাকা রেখে দেও। সেই মোতাবেক হালিম মোল্লা তার জমি-জমি বিক্রি করে পান প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এই টাকা এলাকার মিজানুর, শান্ত, মজিবর সহ কয়েকজনকে হাওলাত (ধার) দেন।

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে পাওনা টাকা চাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন হালিম মোল্লা। রাতে বাড়ি ফিরে আসেননি। পরদিন রোববার সকালে স্থানীয়রা বাড়ির অদূরে একটি বাগানে তাকে অর্ধমৃত অবস্থায় পরে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যদের খবর দিলে তারা সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে, সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিকালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। আজ মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

নিহতের পরিবারের সদস্যদের দাবি টাকা চাইতে গেলে তারা তার জিহ্বা সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে জখম করে মৃত মনে করে ফসলি জমিতে ফেলে রেখে যায়। হত্যাকাণ্ডের বিচার চান তারা।

নিহতের মেয়ে রিনা খাতুন বলেন, আব্বা বাড়িতে একাই থাকতেন। আমি আমার শ্বশুর বাড়িতে থাকি। খবর পেয়ে বাড়িতে এসে আব্বাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে আব্বা মারা যায়।

তিনি আরও বলেন, আব্বা খুব সহজ সরল মানুষ ছিলেন। তিনি তার জমি জমা বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছেন তা বিভিন্ন মানুষকে হাওলাত দেন। ওই টাকা চাইতেই শনিবার বিকালে বাড়ি থেকে বের হন। পরদিন রোববার সকালে স্থানীয় লোকজন অচেতন অবস্থায় বাড়ির অদূরে ফসলি ক্ষেতে পরে থাকতে দেখে বাড়িতে খবর দেয়। আমার চাচারা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। আব্বার জিহ্বা কেটে ফেলা হয়, তাছাড়া আঘাত করে দাঁত ভেঙে ফেলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে জখম করে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়।

রিনা খাতুন আরও বলেন, আমার আব্বার কাছ থেকে যারা টাকা নিয়েছিল তারাই তাকে এভাবে হত্যা করেছে। জিহ্বা কেটে ফেলেছে যাতে বেঁচে থাকলেও তাদের নাম বলতে না পারে।

গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, ‘গত রোববার সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পাই এক বৃদ্ধের মরদেহ পড়ে আছে পাড়াগ্রাম একটি বাগানে। পরে বিষয়টি আমি থানায় জানালে গ্রাম পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করার সময় দেখা যায়, বৃদ্ধর জিহ্বা কাটা অবস্থায় জীবিত আছেন। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। জানতে পেরেছি তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এটি একটি নির্মম ঘটনা। যতটুকু জানতে পেরেছি ধারের টাকা নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।’

আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অর্থ লেনদেনের জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share This Article