
বইমেলায় প্রকাশের আগে বইয়ের পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমিকে দিয়ে যাচাই করিয়ে নিতে ‘পুলিশ কর্মকর্তার পরামর্শ’ ইস্যুতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনও সেন্সরশিপের প্রশ্নই আসে না। সরকার মতপ্রকাশ এবং লেখার স্বাধীনতায় পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে এমন কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার জুলাইয়ের স্পিরিটের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এই স্পিরিটের অন্যতম হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। ফলে বই ছাপার আগে পুলিশ বা অন্য কারও সেটা নিরীক্ষা করার প্রশ্নই আসে না।’
যে পুলিশ কর্মকর্তার বরাতে এই তথ্য শুক্রবার বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, তার কাছে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা।
এর আগে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবিতা পরিষদের অনুষ্ঠানেও এ নিয়ে কথা বলেন উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, ‘এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে যে, বই ছাপানোর আগে বাংলা একাডেমি অথবা পুলিশকে পড়তে দেওয়া উচিত। এবার না পারা গেলেও আগামীবার দেওয়া উচিত। এটা অবিশ্বাস্য, এটা হাস্যকর। এটা আমাদের সরকারের নীতিমালার আশপাশেই নাই। আমাদের সরকার স্পষ্ট বিশ্বাস করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায়। সেটা যদি আমাকে গালমন্দ করে, এতেও কিছু যায় আসে না। আমরা কোনও মতপ্রকাশে সেন্সরশিপে বিশ্বাস করি না।’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবারের বইমেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিএমপির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। এর আগে বইয়ের কন্টেন্ট নিয়ে মেলায় সমস্যা হয়েছে, এমন পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশের কোনো উদ্যোগ আছে কি না; সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা সমন্বয় সভা করেছিলাম; সেখানে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা ছিলেন। তাদের আমরা রিকোয়েস্ট করেছি- এরকম কোনো বই যেন মেলায় না আসে, যেখানে উসকানিমূলক কথা বা লেখা আছে। এটা যেন ওনারা স্ক্যানিং করে, ভেটিং করে স্টলে উপস্থাপন করেন। আমি আশা করি, তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন।’
এসময় পাশ থেকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এবার বাংলা একাডেমিকে সাজেস্ট করছি, আগামীতে নতুন যে বইগুলো প্রকাশিত হবে- তার পাণ্ডুলিপি আগেই যেন বাংলা একাডেমিকে জমা দেওয়া হয়। তারা এটা যাচাই-বাছাই করবে, পড়ে দেখবে যে এমন কোনো কন্টেন্ট যেন ছাপানো না হয়, যেটা আমাদের সোশাল লাইফকে ডিজরাপ্ট করে, আমাদের কমিউনাল হারমনিকে ডিজরাপ্ট করে, আমাদের দেশদ্রোহী কোনো বক্তব্য বা প্রকাশনা বা সরকারকে ডিস্টাবিলাইজ করে; এমন কোনও প্রকাশনা যেন মেলায় না আসে। এটা আমরা রিকোয়েস্ট করেছি বাংলা একাডেমিকে।’
পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আশা করি, আগামী বছর থেকে এটা আমরা করাইতে পারবো বাংলা একাডেমিকে দিয়ে যে- বই প্রকাশনার আগে পাণ্ডুলিপি তাদেরকে দিতে হবে। তারা অনুমতি দিলেই সেটা শুধু প্রকাশ হবে।’
পরে শনিবার এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ডিএমপি জানায়, অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশের আগে পাণ্ডুলিপিতে পুলিশের অনুমোদন লাগবে- এমন কোনও ‘সিদ্ধান্ত বা ‘পরামর্শ দেওয়া হয়নি। তবে উসকানিমূলক বই প্রকাশের ক্ষেত্রে তাদের পক্ষ থেকে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য বাংলা একাডেমিকে অনুরোধ করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে ‘অহেতুক’ ভুল ব্যাখ্যা ও অপপ্রচার হতে বিরত থাকার জন্যও ডিএমপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।