বরিশাল সিটি নির্বাচন ঘিরে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ

বরিশাল সিটি নির্বাচন ঘিরে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ

জামাল কাড়াল বরিশাল ব্যুরো প্রধান ::

বরিশাল সিটি নির্বাচনের এখোনো তারিখ ঘোষণা করা না হলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগামী ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচন।
নির্বাচন কমিশনের এ ঘোষণার পর বরিশাল বিভাগীয় শহরের সিটি নির্বাচনকে ঘিরে মহানগরীসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে এখন আলোচনা তুঙ্গে। বর্তমান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ইতোমধ্যে আবারও প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে তার (সাদিক) আপন চাচাসহ দলের একাধিক নেতার নাম শোনা যাওয়ায় মনোনয়নের বিষয়ে এখনও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
পাশাপাশি বিএনপি এখনো এ বিষয়ে মুখ না খুললেও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিটি নির্বাচনে চমক দেখাতে চায়। এছাড়া আগেভাগেই মাঠে নেমেছেন জাতীয় পার্টি ও বাসদের সম্ভ্রাব্য মেয়র পদপ্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যে দেশের পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে একটি বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। আগামী মাসেই এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বলেন, বিসিসিতে হালনাগাদ ভোটার ২ লাখ ৭৫ হাজার ১৭৭ জন।
সূত্রমতে, ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। ইতোমধ্যে তিনি আবার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে দলীয় মনোনয়ন পেতে এবার তিনি পরিবারের ভেতরে ও পরিবারের বাহিরে প্রতিদ্বন্ধিতার মুখে পরবেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মনোনয়নে চমকও থাকবে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পরেছে। মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে ও মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর একমাত্র চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন ও বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জিয়াউল হক।
আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত জনকণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে আমি আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন চাইবো। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো। তিনি আরও বলেন, বরিশালের মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেলে সেবায় শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি। কারণ বরিশাল নগরবাসী অবহেলিত, সেবা থেকে বঞ্চিত। বর্তমান সরকারের সময় দেশে এতো উন্নয়ন কিন্তু বরিশাল নগরীতে কোন উন্নয়ন হয়নি।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই এবং বর্তমান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ছোট চাচা বর্তমানে বরিশাল নগরীর কালুশাহ সড়কের ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর বাবা তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে যখন শহীদ হন তখন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওই রাতে দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েও ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। তবে তিনি কখনো রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হননি। কয়েক বছর দেশের বাহিরে এবং খুলনায় নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই অনেকটা নিভৃতে ছিলেন। তবে মাঝেমধ্যে তিনি বরিশালে আসতেন এবং এলাকার লোকজনের সাথে সময় কাটাতেন। যোগ দিতেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। থাকতেন ভাড়া বাড়িতে।
আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ প্রথম রমজানে তার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে নগরীর কালুশাহ সড়কের ভাড়া বাড়িতে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করেন। একই সময়ে নগরীর কালীবাড়ি সড়কের সেরনিয়াবাত ভবনে পৃথক দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করে নগর ও জেলা আওয়ামী লীগ। আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর দোয়া অনুষ্ঠানে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বেশ কয়েকজন বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর (সাবেক শহর) আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দীনসহ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন।
ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, এবারের অনুষ্ঠানের ভিন্ন তাৎপর্য ছিলো। কারণ সামনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। দলের বঞ্চিত নেতাকর্মীরা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর রাজনীতিতে আগমনকে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছেন। তার মার্জিত, উদার দৃষ্টিভঙ্গি সবাইকে আশাবাদী করে তুলেছে। পাশাপাশি দলের ভেতরে একটি বড় অংশের মধ্যে সুপ্ত যে ক্ষোভ রয়েছে, সাবেক অনেক নেতাকর্মী এবং বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের সেখানে উপস্থিতি তারই বহিঃপ্রকাশ।
আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ বলেন, বরিশাল নগরীর মানুষের যে উন্নয়নের আকাঙ্খা, যে স্বপ্ন, যে সেবা পাওয়ার কথা ছিল, তা তারা পাননি। আমি যখন এই শহরের মানুষের সাথে কথা বলি, তখন অনুভব করি, তাদের যে সম্মান পাওয়া উচিত, তা তারা পাননি। উন্নয়ন পাননি, সেবা পাননি। এই অসহায়ত্ব আমাকে পীড়া দেয়। তিনি আরও বলেন, একটি এলাকার উন্নয়নে মূল ভূমিকা রাখেন রাজনীতিবিদরা। সেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি ব্যর্থ হয়, তখন তা থমকে পরে। বরিশালের মানুষের যা প্রয়োজন, এখন তা পাচ্ছেন বলে আমার মনে হয়না।
এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, আগামী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এখানে তার কোনো বিকল্প নেই।
আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, আমি শেষবারের মতো দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইবো। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত যা-ই থাকুক, এতো বছর নগরবাসীর সেবায় কাজ করায় জনগণ আমাকে ভোট দেবেন। গত সাড়ে চার বছরে বরিশাল সিটি অনেক পিছিয়ে রয়েছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ির সামনের সড়ক দিয়ে রিকশা পর্যন্ত চলতে পারেনা।
নির্বাচনের বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মহানগর আওয়ামী লীগ তার পক্ষে। সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, আমাদের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। সরকারি বরাদ্দ না পেলেও তিনি নিজস্ব অর্থায়নে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস অনেক আগে থেকেই মাঠে তৎপর রয়েছে। তাকে প্রার্থী মনোনীত করে গত মাসে দলের চেয়ারম্যান চিঠিও দিয়েছেন। জাপার যুগ্ম মহাসচিব ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, বর্তমান মেয়র জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সরকারের কাছ থেকে অর্থ আনতে না পারায় নগরীতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। তিনি নগরবাসীর ওপর কর ও পানির বিলের বোঝা চাঁপিয়ে দিয়েছেন।
মেয়র পদে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থী সৈয়দ এসহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের। সম্প্রতি নগরীতে এই দলের তিনটি সম্মেলনে ক্ষমতাসীন দলের বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে নগরীতে সম্মেলন করে দলটির আমীর সিটি নির্বাচনে ভোটবিপ্লবের ঘোষণা দিয়েছেন। দলের মহানগর মিডিয়া মুখপাত্র মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন টিটু বলেন, এবার সিটি নির্বাচনে তারা প্রার্থীতায় চমক আনবেন। পীর পরিবারের কোনো সদস্য যিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, এমন একজন সিটি নির্বাচনে হাতপাখার প্রার্থী হতে পারেন। নগরীতে তাাঁদের রিজার্ভ ভোট আছে প্রায় ৩০ হাজার। এছাড়াও তারা মেয়র বিরোধী এবং বিএনপির ভোট টানার চেষ্টা করবেন বলেও উল্লেখ করেন। এবারও বাসদের সম্ভ্রাব্য মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, জনগণের অধিকার বাস্তবায়নে আমি মাঠে আছি ও থাকবো।

Share This Article

Share this post

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com