ময়মনসিংহের ভালুকায় শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য ও রাসায়নিক মিশ্রিত পানি কৃষিজমিতে গিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ৩৩৫ একর ধানী জমি নষ্ট হয়ে পড়েছে। ফসল উৎপাদন বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। ক্ষতিপূরণ ও কার্যকর ব্যবস্থা না পেয়ে শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে ভরাডোবা ইউনিয়নের ভরাডোবা বাজার এলাকায় শত শত কৃষক কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
মানববন্ধনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অভিযোগ করেন, উপজেলার ভরাডোবা ইউনিয়নের এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল মিলসহ আশপাশের কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর অপরিশোধিত কেমিক্যালযুক্ত বর্জ্য সরাসরি ড্রেনে ও কৃষিজমিতে ফেলছে। এতে এলাকার জমির উর্বরতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। পানি, বাতাস ও মাটিতে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দূষণ।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুপারিশকৃত ক্ষতিপূরণের অর্থ যেন দ্রুত পরিশোধ করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তারা বলেন, আমরা বছরের পর বছর ধরে জমি চাষ করতে পারছি না, পানি দূষণে মাছ-মুরগিও মরছে। প্রশাসন তদন্ত করে ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করলেও মিল মালিকরা তা বাস্তবায়ন করছে না। শিল্পকারখানার অপরিশোধিত পানির সংস্পর্শে এলেই মাটি কালচে হয়ে যায়, ফসল মরে যায়।
মানববন্ধনে কৃষকরা হুঁশিয়ারি করে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করলে আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে।
কৃষক রুহুল আমিন বলেন, “আমরা বহুবার মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কিছুই করেনি। ১৫ বছর ধরে আমাদের জমি পতিত পড়ে আছে। এতে প্রায় ৩৩ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।”
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, সরকার যখন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী না রাখার নির্দেশ দিয়েছে, সেখানে শিল্পবর্জ্যের কারণে শত শত একর উর্বর জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটি শুধু কৃষকদের ক্ষতি নয়, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও হুমকি।
তারা অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদান, দায়ী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করে পরিবেশবান্ধব শিল্প কার্যক্রম নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ সময় মানববন্ধনে ভরাডোবা ইউনিয়নের শতাধিক কৃষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিক সমাজের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।