বাবার মরদেহ আটকে রাখলেন একমাত্র ছেলে, ২৩ ঘণ্টা পর দাফন

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে। এ কারণে একমাত্র ছেলের কাছে আশ্রয় না পাওয়া বাবা বৃদ্ধ বয়সে ছিলেন মেয়ের বাড়িতে। সেখানে মারা যাওয়ার পর মরদেহ নিজ বাড়িতে দাফনের জন্য নিয়ে এলে গ্রহণ করেননি ছেলে। অনুমতি না মেলায় কবরও খুঁড়তে পারেননি আত্মীয়-স্বজনরা।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় ২৩ ঘণ্টা পর স্থানীয়দের উদ্যোগে ও থানা পুলিশের পরামর্শে মরদেহ দাফন হয়েছে। তবে সম্পত্তির কারণে বাবার মরদেহ একা ফেলে রাখা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের পশ্চিম সরলিয়া গ্রামের তসলিম উদ্দীন (৭০)। একমাত্র ছেলে ভরণপোষণ না করায় মহিষমারী গ্রামে মেয়ে বিউটি আক্তারের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন। বিউটি আক্তার তার দেখাশোনা এবং চিকিৎসা করিয়েছেন।

রোববার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান তসলিম উদ্দীন। আত্মীয়স্বজনদের জানিয়ে রাতেই দাফন করার জন্য মরদেহ আনা হয় পশ্চিম সরলিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে। কিন্তু ছেলে মহসিন আলী বাবার মরদেহ বাড়িতে ঢুকাতে দেয়নি। চাচার বাড়িতে রাখা হয় পুরো রাত।

স্থানীয়রা জানান, মেয়েদের নামে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার কারণে তসলিম উদ্দীনের ছেলে মহসিন আলী বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক হয়নি অভিযোগ তুলে রোববার রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর মরদেহ দাফন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। স্থানীয়দের অনুরোধে মরদেহ নেওয়া হয় ছেলের বাড়িতে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মহসিন আলীর বাড়ির বারান্দায় খাটিয়ার ওপর তসলিম উদ্দীনের মরদেহ রয়েছে। একটি ফ্যান লাগানো হয়েছে। পাশে দুটি চেয়ার পড়ে আছে ফাঁকা। মরদেহের পাশে কোনো আত্মীয়স্বজনকে দেখা যায়নি। বাড়িতে কথা বলতে চেষ্টা করলেও কেউ মুখ খোলেননি। কথা বলতে চায়নি মরদেহ পড়ে থাকা নিয়ে।

তসলিম উদ্দীনের ছেলে মহসিন আলী বলেন, বাবা বোনের বাড়িতে মারা যাওয়ায় সন্দেহ হয়েছিল। এ কারণে থানায় অভিযোগ করেছি। সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ আগের। এখানে সম্পত্তির কোনো বিষয় নয়। এখন আমরা সবাই মিলে গেছি।

দুওসুও ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হবিবুর রহমান বলেন, মৃত্যুর পরপরই জমি ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ছেলে মরদেহ আটকে রাখে। পরে দুপক্ষকে নিয়ে বসে মীমাংশা করা হয়। দুপুরের পর কবরস্থানে কবর খোঁড়ার অনুমতি দেয় মহসিন আলী। এরপর বিকেল ৪টায় জানাজা শেষে তার বাবার দাফন করা হয়।

বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি দুরুল হুদা বলেন, এটি সম্পূর্ণ পারিবারিক সমস্যা। গত রাতে ছেলে একটি অভিযোগ দিয়েছিল। আজ তারা কোনো অভিযোগ না থাকায় এবং মৃত্যুর বিষয়ে সন্দেহ দূর হওয়ায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দাফন হয়ে গেছে।

Share This Article