রোহিঙ্গা দম্পতি জুবায়ের ও সামিনা থাকেন কক্সবাজার শহরের ৬ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী গ্রামে। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যমতে তারা আপন ভাইবোন। মৃত আহমদ আলী ও নাছিমা খাতুনের ছেলে জুবায়ের শ্বশুর মোহাম্মদ আলীকে বাবা ও শ্বাশুড়ি মনিকরা বেগমকে মা উল্লেখ করে বাংলাদেশের নাগরিক পরিচয়পত্র নিয়েছেন, যার এনআইডি নম্বর ১৯২৬৬৫৫২৬৫।
একইভাবে জুবায়েরের ছোট ভাই মো. আমান তার স্ত্রী খতিজা বেগমের বাবা মো. হোছন ও মা রহিমা খাতুনকে নিজের বাবা-মা উল্লেখ করে পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ভোটার হয়েছেন, যার নম্বর ২২১৩৮৮০০০৯৯৭।
এ বিষয়ে জুবায়ের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোটবেলা থেকে আমার জন্মদাতা বাবা মায়ের সাথে কোন সম্পর্ক নাই। আমি যাদের কাছে মানুষ হয়েছি তাদের বাবা-মা উল্লেখ করে ভোটার হয়েছি। এছাড়া তাদের মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা চার ভাই ও দুই বোন। এরমধ্যে আমান ভোটার হয়েছে। বাকিরা এখনো হয়নি।
এদিকে এলাকাবাসীর তথ্যমতে আমজাদ হোসেন ও ছেনুয়ারা বেগমও সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু জাতীয়তা পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী তারাও আপন ভাইবোন। এক্ষেত্রে ছেনুয়ারা বেগম (এনআইডি ২২১৩০০০০০০৮৬) তার শ্বশুর মনির উজ জামানকে বাবা ও শ্বাশড়ি দিলবাহারকে মা উল্লেখ করে পরিচয়পত্র নিয়েছেন।
২০০৮ সালে এনআইডি নেয়া ছেনুয়ারা ভোটার ফরমে অবিবাহিত দেখালেও পরে ২০২২ সালে এই দম্পত্তির ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২২১৩০০৭৭৯৩৭৬) জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন।
এ বিষয়ে ছেনুয়ারার স্বামী আমজাদ হোসেন বলেন, আমার স্ত্রীর ছোটবেলায় বাবা-মা মারা গেছেন। সেই থেকে আমার বাড়িতে বড় হয়। তাই আমার বাবা-মায়ের নাম দিয়ে আমার স্ত্রীর আইডি কার্ড সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ছেনুয়ারার প্রকৃত মা এখনো জীবিত রয়েছেন। তিনি ওই এলাকাতেই বাস করেন।
দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়ার গরুর হালদা গ্রামের রোহিঙ্গা দম্পত্তি বান্টু ও ছেনুয়ারার তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এদের মধ্যে মোহাম্মদ মুন্না কনিষ্ঠ। এই মুন্নাই তার চাচা শ্বশুর মৃত মোহাম্মদ আলীকে বাবা ও চাচি শ্বাশুড়ি রাশেদা বেগমকে মা উল্লেখ করে আইডি কার্ড সংগ্রহ করেছেন, যার নম্বর ২২১২৯৪০০০৩০৮। দক্ষিণ সাহিত্যিক পল্লীর লোকজন হোসেন আজাদ ও হোসনে আরাকে চেনে ভাইবোন হিসেবে। কিন্তু এই নারী তার ভাই হোসেন আজাদ ও ভাবী ছায়রা খাতুনকে বাবা-মা সাজিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়েছেন, যার আইডি নম্বর ২২১৩০০০০০৫১৪।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হোসনে আরা বলেন, হোসেন আজাদ ও ছায়রা খাতুন আমার ভাই আর ভাবী। আইডি কার্ড অনুযায়ী তারা বাবা-মা কেন এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।
২০০২ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আবুল কালাম ও তার স্ত্রী মুছানা খাতুন ৪ ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে শহরের দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লীর গোলুর মার বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেই থেকে তাদের এলাকাবাসী বার্মাইয়া আবুর পরিবার বলে চেনে। এরপর তারা কখনো এই এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও যায়নি। কিন্তু তারা এখন রাজধানীর ঢাকার গুলশান মডেল টাউন বাড্ডার (হোল্ডিং নং-১৪৫৯) ভোটার। যেখানে কালামের এনআইডি নম্বর ২৮৫৫২১৮২৮১, এবং মুছানা খাতুনের ১০২৭৩৫৪৯৯৩। তাদের ছোট ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক বর্তমানে ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টে কর্মরত থাকার পাশাপাশি কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ফুড বিভাগের শিক্ষার্থী। আর তাদের দুই ছেলে মোহাম্মদ ইসমাঈল ও আইয়ূব এখন মালয়েশিয়া থাকে।
এদিকে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে আসা রিনা আকতার ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড থেকে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করেছেন, যার নম্বর ২২১২৭৭৫২৯৮৪১। এমন অভিযোগ পেয়ে গত বছর জেলা বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা তাকে ডেকে নেয়।
এমনই নানা অপকৌশল প্রয়োগ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় কক্সবাজার পৌর শহরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা জোগাড় করেছে বাংলাদেশি পরিচয়পত্র। এভাবে নাগরিক পরিচয়পত্র গ্রহণকারী ৮০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে ২০২৪ সালের জুন মাস থেকে তদন্ত নামে নির্বাচন কমিশন। আর এই তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সংযুক্ত করেছে ইসি। ইতিমধ্যে দুটি আলাদা তালিকা নিয়ে তদন্তের কাজ শুরু করেছে সরকারি সংস্থা দুটি। তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।
ইসির তথ্যমতে, সচেতন নাগরিক পরিচয়ে তদন্তপূর্বক পরিচয়পত্র বাতিলের দাবিতে ২০২৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ও ১ অক্টোবর রোহিঙ্গারা কৌশলে বাংলাদেশি ভোটার হয়েছে এমন দুটি চিঠি ইসিতে আসে। সেখানে প্রথমটিতে ৪৭ জনের নাম ও দ্বিতীয় চিঠিতে ৩৩ জনের নাম ছিল। বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও দুদক মিলে জেলা নির্বাচন অফিসের সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তালিকায় যারা রয়েছেন তারা হলেন, ৪,৫, ৬ নং ওয়ার্ডের গেল স্থানীয় নির্বাচনে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রোকেয়া আক্তার কেয়া (এনআইডি নং-২২১৩০০৭৭৯৪৩৯), ৬ নং ওয়ার্ডের সাহিত্যিকা পল্লীর এনামুল হক ও জোহরা খাতুনের মেয়ে সাদিয়া আক্তার প্রকাশ হরই বুড়ির মেয়ে (২২১৩০০৭৭৯২৯৫), হোসেন আজাদ ও ছায়রা খাতুনের দুই ছেলে সাদ্দাম হোসাইন, (২২১৩০০০০০৫৩০), মোবারক হোসেন, (২২১৩০০৭৭৯৩৯৭), সরাফত আলী ও মাবিয়া খাতুনের ৪ ছেলে ইউসুফ আরমান, (২২১৩০০৪২৩৮৪৬), কামাল আরমান, (২২১৩০০০০০০১৪), আবদুল আজিজ আরমান (২২১৩০০৪২৩৮৪৯), ইউনুস আরমান (২২১৩০০৪২৩৮৪৮), রহিম সিকদার ও ফরিজা খাতুনের মেয়ে ছেনুয়ারা বেগম (২২১৩০০৪২৩৮৩৭), মফিজুর রহমান ও সবুরা খাতুনের তিন ছেলে মো.আলী (২২১৩০০০০০৩৫৭), আনোয়ার হোসেন (২২১৩০০৪২৩৮৪১), মো. হোসাইন আলী (৮৬৫১৮২৪২৮৯), মো. ইব্রাহিম ও মোছা. কাজলীর ছেলে মো. রুবেল (২২১৩০০৭৭৯৩০১), মোহাম্মদ আলম ও জান্নাত আরার দুই ছেলে আব্দুল্লাহ আল নোমান (২২১৩০০০০০৩৭৪), মিনহাজুল ইসলাম (২২১৩০০০০০৫৫৯৪), মৃত হাবিব উল্লাহ ও হাফেজা খাতুনের ছেলে আরিফুল ইসলাম (২২১৩০০০০০৫২৭), আব্দুল হাবিব ও জরিনা খাতুনের ছেলে মোহাম্মদ ইউনুছ (২২১৩০০০০০৫৯৬), শাহ আলম ও সালমা বেগমের ছেলে মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন (২২১৩০০০০০১৫৮), একই ওয়ার্ডের পল্ল্যানিয়া কাটা গ্রামের লাল মিয়া ও ফাতেমা খাতুনের ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে আবুল হাশেম (২২১২৭৭০০০০৬৩), আবুল কাশেম (২২১২৭৭০০০০৬৪), ছৈয়দ কাশেম (২২১২৭৭০০০০৬১), ইয়াছমিন আক্তার (২২১২৭৭০০০১৩৮), আবুল হাশেম ও আনজুমান আরার দুই ছেলে মিজানুর রহমান সিফাত, (২২১২৭৭০০০১৩৬), আনিসুর রহমান (২২১২৭৭৫২৯৮৭৬), মোজাহের আহমদ ও গোলজার বেগমের ছেলে কামাল হোসেন (২২১২৭৭৩৭০৭৯৫), মো. হোছাইন ও গোল মেহেরের ছেলে হাবিবুর রহমান (২২১২৭৭৪৬৭৮৪৮) ও তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে জাগির হোছেন (২২১২৭৭৪৬৭৮৪৫ ), ইমাম হোছেন (২২১২৭৭৪৬৭৮৪৪), ফিরোজা বেগম (এনআইডি ২২১২৭৭০০০০৪৭), নুর বেগম (২২১২৭৭০০০০১৬) ও আমিনা খাতুন (২২১২৭৭০০০০৮৭), ফজল আহমদ ও ফিরোজা বেগমের মেয়ে নাছিমা আকতার (২২১২৭৭০০০১৫৭), সোনা আলী ও ধয়া বিবির মেয়ে জুহুরা বেগম (২২১২৭৭৫২৯৮৮৫), আলতাফ হোসেন ও ছমুদা খাতুনের দুই মেয়ে রহিমা বেগম (২২১২৭৭৫১৪২১৮), মাহাবু বেগম (২২১২৭৭৪৬৭৯৮৬), আবুল হোসেন ও মেহেরুর মেয়ে ইসমত আরা (২২১২৭৭৪৬৭৮২৩), নুরুল ইসলাম ও তৈয়বার ১ ছেলে ও ১ মেয়ে মাহবুবুর রহমান (২২১২৭৭০০০০২১) ও সানজিদা আকতার সাথী, (২২১২৭৭০০০০২০), মোহাম্মদ সুলতান ও আছিয়া খাতুনের ছেলে মোহাম্মদ আজিজুর রহমান (২২১২৭৭০০০০৩৩), আবুল হোছন ও আনোয়ারা বেগমের মেয়ে মিনা আকতার (২২১২৭৭৫২৯৮৮৪), হাবিব উল্লাহ ও খালেদা বেগমের ছেলে দেলুয়ার হোছন, (২২১২৭৭৫২৯৮৮৩ ), সিকদার পাড়ার মো. ইদ্রিসের স্ত্রী মমতাজ বেগম (২২১৩০৫০০০২০৮), শহরের ১ নং ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়ার আব্দুর রশিদ ও নাছিমা বেগমের মেয়ে মোছাম্মৎ উম্মে কুলসুমা (২২১২৬৬০০০১৯৯), মোহাম্মদ আব্বাস ও গোলবাহারের ছেলে মোহাম্মদ জাকারিয়া (২২১২৬৬০০১৬০১), হাফেজ আহমদ ও আছিয়া খাতুনের ছেলে নুর হোসেন (২২১২৬৬৪৫৬৭১৫), লাল মোহাম্মদ ও মাইয়েশা বেগমের ছেলে আবু তাহের (২২১২৬৬০০১৭৯৫), জাহাঙ্গীর আলম ও ছকিনা বেগমের মেয়ে কমরু আক্তার (২২১২৬৬০০১৭১৫), মো. হাসান ও হোসনে আরার ছেলে আলমগীর (২২১২৬৬০০০৮৩৫), আমির হামজা ও গোল বানুর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (২২১২৬৬০০০৩৩০), শামসুল আলম ও মোস্তফা খাতুনের ছেলে মো. ইসমাইল (২২১২৬৬৫১৪১৬৭), কবির আহমদ ও হাজেরা খাতুনের ছেলে মিজান (২২১২৬৬৫১৭১৩৪), সমিতি পাড়ার আবদুস শুক্কুর ও মনোয়ারা বেগমের ছেলে আবদুর রাজ্জাক (২২১২৬৬৪৫৫৮৪৭), আব্দুল হাকিম ও আনোয়ারার ছেলে রশিদ আহমদ (২২১২৬৬০০১২৯০), জাফর আলম ও খতিজা বেগমের ছেলে জিয়া রহমান (২২১২৬৬০০১৭৩৯), নুরুল হক ও চেহের বেগমের ছেলে আজিজুল হক (২২১২৬৬০০০৫৮৩), আলী আহমদ ও হাছিনা বেগমের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক (২২১২৬৬৫১৫৮৬১), পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের পাহাড়তলী গ্রামের মৃত নাজির হোছন ও জাহান আরার ছেলে মাতবর আলী (২২১৩৬৭০০০২৬৯), মো. কাশেম ও ছায়েরা খাতুনের তিন ছেলে নুর মোহাম্মদ (২২১২৮৬৩৭৩৫৫৫), ইয়ার মোহাম্মদ (২২১২৮৬৩৭৩৫৫৬) ও দিল মোহাম্মদ (২২১২৮৬৩৭৩৫৫৭), কাদের হোসাইন ও আমিনা খাতুনের ছেলে নুরুল বশর (২২১২৮৬৩৭৩৫৬৯), নাছির উদ্দিন ও রাবেয়া বেগমের ছেলে নেজাম উদ্দিন (৮২৫৬৩০৯১৮১), আমির হাকিম ও ছলিমা খাতুনের ছেলে ইয়াকুব (৩৭৫৬১০৭২৫০), জাফর আলম ও খতিজার ছেলে মাহমুদুল হক (২২১২৬৬০০১৪৮০), ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া বাজার এলাকার দক্ষিণ পাতলী গ্রামের আমিরুজ্জামান ও কালা বিবির ছেলে জাকির হোসেন (৯১৪২৯৬২৫৮৯), ৮নং ওয়ার্ডের বৈদ্যঘোনার আব্দুল হাকিম ও জোহুরা বেগমের মেয়ে মছুদা বেগম (২২১৩৬৯৩৮১৭৮৭ ), মো. ছমিউল্লাহ ও রোকেয়া বেগমের ছেলে এস এম হাবিব উল্লাহ (২৮৩০০৩৬৭২৫), মো.জামানের স্ত্রী দিল নেওয়াজ (১৯৯৫২২১৯০৬৩০০০৩৮৬ ), সব্বির আহমদের স্ত্রী হাছিনা বেগম (১৯৯০২২১৯০৬৩০০০৫১২ ) এবং ৪ নং ওয়ার্ডের মধ্যম টেকপাড়ার মো. রশিদের স্ত্রী নুর নাহার (১৯৮১২২২২৪০৩০০০০০৬)।
দক্ষিণ সাহিত্যিকা পল্লী জনকল্যাণ সোসাইটির সভাপতি হোসাইন আলী বলেন, আমাদের এলাকায় বসবাসরত অনেক রোহিঙ্গাই নানা কৌশল অবলম্বন করে জাতীয় নাগরিক পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছে। এজন্য দায়ী মূলত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। কারণ ব্যক্তি সনাক্ত, প্রত্যায়নপত্র দেওয়া ও যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য তারা। এখানে সমাজ কমিটির কোন কাজ নেই।
এ বিষয়ে ৬ নং ওয়ার্ডের তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ওমর ছিদ্দিক লালু বলেন, আপনি যাদের নাম বলেছেন তাদের হয়ত সামনে দেখলে চিনতে পারব। এভাবে চিনতে পারছি না। কাজেই তারা কিভাবে ভোটার হয়েছে আমার জানা নেই।
তবে ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর ইয়াসমিন আকতার বলেন, যে তালিকার কথা বলছেন সেই তালিকার কথা আমি শুনেছি। তাদের চিঠি দিয়ে জেলা নির্বাচন কমিশনে ডাকা হয়েছিল। তবে সরকারের পট পরিবর্তনে কারণে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের সেই শুনানি হয়নি।
তিনি আরো বলেন, তালিকায় থাকা দুই-তৃতীয়াংশ লোক রোহিঙ্গা এটা সত্য। তারা কিভাবে ভোটার হয়ে গেছে আমার জানা নেই।
কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল আলম বলেন, গেল ১ বছরের মধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ৪৭ জন ও ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে আমাদের কাছে দুটি তালিকা পাঠানো হয়। এরমধ্যে প্রথমটির জন্য ঢাকাতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৪৭ জনের নাম থাকা প্রথম তালিকাটি ২০২৪ সালের জুলাইয়ের শেষভাগে আমাদের হাতে আসে। সেই তালিকায় থাকা লোকজনের ভোটার হওয়ার সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আমরা এরপর প্রত্যেকের জন্য চিঠি ইস্যু করি। ওইসময় অনেককেই আমরা খুঁজে পাইনি। আবার অনেকেই ডকুমেন্ট জমা দেননি। তবে ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে কমিশন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি আমাদের সাথে আর যোগাযোগ করেনি। তাই কিছু ডকুমেন্ট এখনো আমাদের কাছে রয়েছে।
অপরদিকে দ্বিতীয় তালিকার ক্ষেত্রে আমাদের মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। নির্দেশ পেয়ে আমরা সরকারের দুটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থাকে তদন্তের দায়িত্ব দেই। সংস্থা দুটির প্রতিবেদন মতে তালিকায় থাকা ২৯ জন যথাযথ কাগজপত্র জমা দিতে পারেনি। আমরা সেই প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছি।