বিএনপির অর্থদাতা ট্যাগে মিথ্যা মামলা-নির্যাতন 

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ‘বিএনপির অর্থদাতা’ ট্যাগ দিয়ে দখল করা হয়েছিল ট্রান্সপোর্ট ও স্টিল খাতের প্রতিষ্ঠান এরশাদ গ্রুপ। ডেমরা, সোনারগাঁয়ের কারাখানা; বাংলামোটরে অফিস ও ধানমন্ডির বাসা দখল করে নিয়েছিল আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টরা। ট্রান্সপোর্টের কাজে ব্যবহৃত শতাধিক ট্রাকও দখলে নেয় তারা। বাসা, অফিস, কারাখানা দখল করার পাশাপাশি এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এরশাদ আলীর বিরুদ্ধে করা হয় একের পর এক মামলা। এসব মামলায় ৪ বছরের বেশি সময় জেল খাটতে হয় তাকে।

এই লুটপাটের নেতৃত্বে ছিল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার বড় ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান জ্যোতি। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান খান লিটন। তাদের হাতিয়ার ছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র একাধিক কর্মকর্তা। রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে ওঠা পুলিশ ও দেশের প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক চক্রের থাবায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন বলে দাবি করেছেন দেশের ট্রান্সপোর্ট ও স্টিল খাতের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এরশাদ আলী।

আজ শনিবার রাজধানীর মগবাজারের একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ আলী বলেন, আমাকে বিএনপির অর্থদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ৪২টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। একের পর এক গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মাধ্যমে আমার ব্যবসা ধ্বংস করা হয়েছে। কলাবাগানের নাসির ট্রেড সেন্টারে এরশাদ গ্রুপের প্রধান কার্যালয়, ধানমন্ডির বাসভবন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের গুদাম ও স্টিল মিলসহ সবকিছু তারা দখল করে নেয়। আমার ১৩৭টি ট্রাক লুট করে নেওয়া হয়েছে। সোনারগাঁয়ের জংদা রি-রোলিং মিলস ও ডেমরার স্টিল মিল শামীম ওসমানের সহযোগী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী আজিজুর রহমান আজিজ দখল করে নেয়। আজিজের নেতৃত্বে দুই কারখানা থেকে প্রায় আড়াই শ কোটি টাকার মেশিন ও মালামাল লুট করা হয়েছে। তিনি এখনও এলাকায় ক্যাডার বাহিনী চালান।

সম্প্রতি দর্শনা সীমান্ত থেকে পালানোর সময় আটক হওয়া আজিজুর রহমান আজিজের বিরুদ্ধে হত্যা, গুম ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে উল্লেখ করে এরশাদ আলী বলেন, আমরা আদালতের কাছে দাবি করেছি, এই সন্ত্রাসীকে যেন জামিন দেওয়া না হয়। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে নিশ্চিত করা হয়। 

হয়রানির বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমাকে বারবার মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। ২০১৭ সালে তিনবার আমাকে তুলে নিয়ে প্রতিবার ৫০ লাখ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। ডিবির তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার বাতেন ও ডিবি লালবাগের এডিসি মাহমুদা আফরোজ লাকীকে টাকা না দিলে হয়তো আজ বেঁচে থাকতাম না। দীর্ঘ কারাবাস ও নির্যাতনের কারণে শারীরিকভাবে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার ৮০ শতাংশ কিডনি নষ্ট, ডায়াবেটিস ও লিভার সিরোসিসে ভুগছি।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বলেন, এরশাদ আলী বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। তার করা মামলা এখনও বিচারাধীন। এখন অন্তত আদালতের মাধ্যমে যেন তিনি ন্যায়বিচার পান, সেই প্রত্যাশা করছি।

Share This Article