
বিএনপির কর্মী সমাবেশে অংশ নিয়ে আগামী নির্বাচনে নেতা বেছে নিতে ভুল না করার আহ্বান জানিয়েছেন জামালপুরের মেলান্দহ পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে একজন নির্বাহী কর্মকর্তার এ ধরনের বক্তব্যকে চাকরিবিধির লঙ্ঘন বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
রবিবার বিকালে সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের বাটিকামারী এলাকায় এ কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তব্য দেন মেলান্দহ পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। সেদিন তার দেওয়া বক্তব্যের ৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সোমবার দুপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসিবে জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ফরিদুল কবীর তালুকদার (শামীম) উপস্থিত ছিলেন।
কর্মী সমাবেশে অংশ নেওয়ার ভিডিও বক্তব্য ও কিছু ছবি পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন। অথচ সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এর বিধি ৫ (১) ও ৫ (২) অনুযায়ী, কোনও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না।
ভিডিওতে মেলান্দহ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামানকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে। নেতা কী এবং নেতা কাহাকে বলে? নেতা হচ্ছেন তিনিই, যিনি নিজে স্বপ্ন দেখেন এবং তার কর্মীদের স্বপ্ন দেখান। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বপ্ন মানুষ দুইভাবে দেখেন, একটি হলো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেন। আবার কিছু কিছু মানুষ স্বপ্ন দেখেন জেগে। যাকে আমরা ভিশন বলি। আমরা এমন একজন নেতাকে পেয়েছি। যিনি কখনও ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেননি। তিনি ১৭ বছর এই সরিষাবাড়ীবাসীর জন্যে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেছেন। সরিষাবাড়ীবাসী কী পাবেন এবং তাদের সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে নেওয়া যাবে, সেই স্বপ্ন দেখার জন্যে নিজেকে নিয়জিত রেখেছিলেন।’
বক্তব্যের একপর্যায়ে মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘১৭ বছর যিনি স্বপ্নে বিভর ছিলেন। আর আকস্মিক একজন এসে মাঠজুড়ে বলবেন, আমি আপনাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে দেবো। আর আপনি সেটাকে বিশ্বাস করে নেবেন। আমরা কী এতই বোকার রাজ্যে বসবাস করি। অবশ্যই না, আমরা এতটা বোকার রাজ্যে বসবাস করি না। যিনি আমাদের স্বপ্ন দেখান—একটি ভিশন, একটি লক্ষ্য ও একটি উদ্দেশ্যে। আমরা সেই নেতাকে চাই। যে নেতা তার দলের কর্মীদের জন্য কাঁদেন, যে নেতা কর্মীদের জন্যে ব্যথিত হন। আমরা সেই নেতাকে বেছে নিতে চাই। এখানে যারা উপস্থিত আছেন। আমি সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাবো, আপনারা অবশ্যই আগামী নির্বাচনে নেতা বেছে নিতে ভুল করবেন না। যারা ইতিমধ্যে বেইমানি ও বিশ্বাসঘাতকা করেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, সামনে আসিতেছে শুভদিন।’
এ বিষয়ে জানতে মো. মনিরুজ্জামানের মোবাইল নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ধরেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। এরপর ফোনটি বন্ধ করে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক এস এম আলমগীর বলেন, ‘গতকাল তিনি (মনিরুজ্জামান) পৌরসভায় আসেননি এবং কোনও ছুটিও নেননি। সত্যি কথা বলতে, তিনি পৌরসভায় নিয়মিত অফিস করেন না। তার মতো করেই অফিসে আসেন এবং চলেও যান। আমাকেও কিছুই জানান না। কর্মী সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার ভিডিওটি আমি দেখেছি। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কোনোভাবেই এটা করতে পারেন না। ইতিমধ্যে বিষয়টি মৌখিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানানো হয়েছে। আমরা অফিশিয়ালি জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।’