সিলেটের কানাইঘাটের এক পাথর ব্যবসায়ীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জাকারিয়া হাবিব জাকু এবং জেলা যুবদলের সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে। চাঁদা দাবির ভিডিও ও অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনা বিএনপি ও যুবদল নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
অভিযোগকারী কয়ছর আহমদ কানাইঘাট উপজেলার ৩নং দিঘীরপাড় ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও একজন প্রতিষ্ঠিত পাথর ব্যবসায়ী। তার দাবি, জাকারিয়া হাবিব জাকু ও গিয়াস উদ্দিন তার বিরুদ্ধে দুটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করেছেন এবং তাকে ওই মামলাগুলোতে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এই দুটি মামলার সাক্ষী হিসেবে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ উদ্দিন সাজুর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
কয়ছর আহমদের অভিযোগ, মামলা দায়েরের পর থেকে ওই দুই নেতা তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আদালতে এফিডেভিট করার প্রস্তাব দেন। তবে এর বিনিময়ে তাদের দুজনকে মোট ১০ লাখ টাকা (প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকা) দিতে হবে বলে জানান। সম্প্রতি, সিলেট নগরীর রংমহল টাওয়ারের সামনে কয়ছরকে ডেকে পাঠান জাকারিয়া হাবিব জাকু ও গিয়াস উদ্দিন। সেখানে তারা আবারও চাঁদার টাকা দাবি করেন এবং টাকা না দিলে আরও বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে শায়েস্তা করার হুমকি দেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মনে করেন, তারা দলের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ‘মামলা বাণিজ্য’ করছেন।
উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ উদ্দিন সাজু এই দুই মামলায় সাক্ষী হওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘আমি এই দুটি মামলার সাক্ষী, এটি আমি জানি না। তবে রাজনৈতিক মামলা থাকলে বিএনপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি আমাকে সাক্ষী দেন, তাহলে তো সাক্ষী থাকা স্বাভাবিক। গিয়াস উদ্দিনের মামলায় আমাকে কেন সাক্ষী করা হলো তা আমার জানা নেই।’
এদিকে চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা যুবদলের সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন জানান, ‘আমি কোনো চাঁদা দাবি করিনি।’ তার বিরুদ্ধে আমার মামলা রয়েছে।
একইভাবে কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জাকারিয়া হাবিব জাকু ও চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কয়ছর আহমদের কাছে কোনো চাঁদা দাবি করিনি।’ রংমহল টাওয়ারের সামনে সাক্ষাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রংমহল টাওয়ারে আমার ছোট ভাইয়ের দোকান রয়েছে, উনি (কয়ছর) আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। এমনকি আরও আমার মামলার আসামিরা আমার সাথে যোগাযোগ করছেন।’
পাথর ব্যবসায়ী কয়ছর আহমদ জানান, ‘আমি ব্যবসায়ী লোক ও মেম্বার ছিলাম, আমি কোনো দলের লোক নই। আমার নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে তারা চাঁদা দাবি করছে। আমি এ বিষয়ে আমার দুই মামলার সাক্ষী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ উদ্দিন সাজু ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাকে রংমহল টাওয়ারের সামনে আসার জন্য বলেন। আমি সেখানে গেলে তারা আমার কাছে দুজনে ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। চাঁদা দিলে দুই মামলা থেকে আমাকে আদালতে এফিডেভিট দিয়ে অব্যাহতি দিবেন বলে জানান। তবে আমি কোনো অপরাধের সাথে জড়িত নই, আমি কেন টাকা দেব।’
জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ বলেন, ‘চাঁদাবাজ, দুষ্কৃতিকারীদের যুবদলে কোনো স্থান নেই। অভিযোগ সত্য হলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মোমিন বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যুবদল সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিবে।’
জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কাউকে হয়রানি করা হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সুশীল সমাজ ও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।