
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারি ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গুরু রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের জমিদাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুর রহমান হাওলাদারের ছবি সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির সহ কৃষি বিষয়ক সম্পাদক রিপন বেপারীর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে রিপন বেপারী বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে অফিস কক্ষ থেকে মরহুম আব্দুর রহমান হাওলাদারের ছবি নিজ হাতে নামিয়ে ফেলেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয় কতৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পঞ্চপল্লী গুরু রাম উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ, গীতিকার ও সমাজসেবক অতুল প্রসাদ সেনের উদ্যোগে। তিনি এই বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে এলাকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে মরহুম আব্দুর রহমান হাওলাদার বিঝারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্বকালীন সময়ে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষা মানোন্নয়ন, শিক্ষক-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
তিনি সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা ও নিজ অর্থায়নে বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ, খেলাধুলার উপযোগী মাঠ তৈরির জন্য পুকুর ভরাট এবং নিজ ক্রয়কৃত জমি বিদ্যালয়ের নামে দান করেন। তাঁর অবদানে বিদ্যালয়টি দ্রুত এলাকায় অন্যতম মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ২০০২ সালে মৃত্যুর পর তৎকালীন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি রেজুলেশনের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে তাঁর স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ছবি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সম্প্রতি বিএনপি নেতা রিপন বেপারী কোনো অনুমোদন বা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই প্রভাব খাটিয়ে ছবিটি সরিয়ে ফেলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে মরহুম আব্দুর রহমান হাওলাদারের ছেলে মিজানুর রহমান রাসেল বলেন,“আমার বাবা এই বিদ্যালয়ের উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছেন এবং জমি দান করেছেন। বর্তমান প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি আমার বাবা প্রদত্ত জমির উপর নির্মিত। আমার বাবা সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ২০০২ সালে বাবার মৃত্যুর পর বিএনপি জোট সরকারের আমলে তৎকালীন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি রেজুলেশন করে তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে ছবি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। কিন্তু বিএনপি নেতা রিপন বেপারী দলের হাই কমান্ডের দোহাই দিয়ে বাবার ছবি নামিয়ে ফেলেছেন। আমার বাবা একজন সম্মানিত মানুষ ছিলেন, তাঁকে অসম্মান করার অধিকার কারো নেই।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম চন্দ্র দাস বলেন, “গতকাল বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে রিপন বেপারী এসে বলেন বিএনপির হাই কমান্ডের নির্দেশ আছে—আব্দুর রহমান হাওলাদারের ছবি এখানে থাকতে পারবে না। এই বলে তিনি ছবিটি নামিয়ে ফেলেন। তবে আজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসে দাবি তুলেছে, আব্দুর রহমান সাহেবের ছবি পুনঃস্থাপন করার জন্য।”
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহাম্মেদ রয়েল মাঝি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জমি দাতাদের ছবি সংরক্ষন করা বা না করা ম্যানেজিং কমিটির এখতিয়ার। যিনি ছবিটি নামিয়েছেন এটাও তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এর সাথে আমাদের দলের কোন সম্পৃক্ততা নেই।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা রিপন বেপারীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।