মালয়েশিয়ার ২০২৬ সালের বাজেটে বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধি, অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশন ত্বরান্বিত করা এবং উন্নত কর্মসংস্থান তৈরিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ দেশের অর্থনীতিকে রপ্তানিনির্ভর কাঠামো থেকে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবননির্ভর কাঠামোর দিকে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে শ্রমবাজারে কাঠামোগত পরিবর্তন আসবে, যার প্রভাব সরাসরি যুবসমাজ ও বিদেশি শ্রমিকদের ওপর পড়তে পারে।
উপ-বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী লিউ চিন টং বলেন, সরকারের দিকনির্দেশনা স্পষ্ট—মালয়েশিয়ানদের জন্য ভালো কর্মসংস্থান তৈরি করা এবং শিল্পকে অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তৃত গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা। তাঁর ভাষায়, মালয়েশিয়াকে এখন শুধু “মেড ইন মালয়েশিয়া” নয়, বরং “মেড বাই মালয়েশিয়া”-র দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজেটের এই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়িত হলে এর তিনটি প্রধান জনপ্রভাব দেখা দিতে পারে। প্রযুক্তি ও অটোমেশনকেন্দ্রিক শিল্প বৃদ্ধির ফলে যুবসমাজ, বিশেষত উচ্চশিক্ষিত এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতাসম্পন্ন তরুণরা উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোর স্নাতকরা সরাসরি উপকৃত হতে পারেন। তবে গ্রামীণ বা কম দক্ষ যুবকদের জন্য নতুন চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
অটোমেশনের প্রসার এবং স্থানীয়দের জন্য উচ্চ আয়ের চাকরির সুযোগ তৈরির উদ্যোগ বিদেশি শ্রমিকদের চাহিদা কমিয়ে দিতে পারে, বিশেষত নিম্নদক্ষতার কাজে। মালয়েশিয়ার নির্মাণ, প্ল্যান্টেশন ও সেবা খাতে বিদেশি শ্রমিকদের প্রভাবশালী উপস্থিতি থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদে এসব খাতেও প্রযুক্তি নির্ভর সমাধানের প্রবণতা বাড়বে। এর ফলে বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে কমতে পারে।
সরকারি নীতি যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে স্থানীয়দের জন্য বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে। কিন্তু একইসঙ্গে শ্রমবাজারের ভারসাম্য রক্ষা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে—কারণ হঠাৎ করে বিদেশি শ্রমিক নির্ভর খাতগুলোতে ঘাটতি দেখা দিলে উৎপাদনশীলতা প্রভাবিত হতে পারে।
মালয়েশিয়া ইতিমধ্যে রপ্তানিতে ১ ট্রিলিয়ন রিঙ্গিত অতিক্রম করেছে, যেখানে বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য, বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম ও পাম তেল মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে দেশের বাণিজ্য কর্মক্ষমতা ৩.৮% বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১.৯৮ ট্রিলিয়ন রিঙ্গিত।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাজেট ২০২৬ সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে এটি মালয়েশিয়াকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে বের করে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির পথে নিয়ে যাবে। তবে তার জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন, যাতে যুবসমাজ এবং বিদ্যমান শ্রমশক্তি নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।