জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে মেগাসিটি ঢাকা থেকেও এ সমস্যার ছোঁয়া বিরামহীন।
রবিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৭টা নাগাদ ঢাকার বায়ুমানের স্কোর ৭৪ রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ২৩তম স্থান দখল করেছে। এ স্কোরকে দূষণের দিক থেকে ‘সহনীয়’ বা ‘মধ্যম’ হিসেবে গণনা করা হয়।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে ভারতের দিল্লি ১৭১ স্কোর নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। তালিকার দ্বিতীয় অবস্থান দখল করেছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, যার একিউআই স্কোর ১৫৩। এরপর তৃতীয় অবস্থান নিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা (১৫১ স্কোর)।
চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে উজবেকিস্তানের তাসখন্দ (১৪৯ স্কোর) এবং পঞ্চম স্থানে আছে ফিলিপাইনের মানিলা, যার স্কোর ১৩১।
এই তথ্য প্রকাশ করে থাকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিমুহূর্তে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে এবং একিউআই (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) সূচকের মাধ্যমে জনসাধারণকে জানায় কোনো শহরের বায়ু কতটুকু নির্মল বা দূষিত। এছাড়া তারা সতর্ক করে দেয়, কোন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি মানুষের জন্য তৈরি হতে পারে।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত হলে তা ‘ভালো’ হিসেবে ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ স্কোরকে ‘সহনীয়’ বা ‘মধ্যম’ হিসেবে গণনা করা হয়। সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে ধরা হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ স্কোর অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ স্কোর ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বায়ুদূষণ সব বয়সের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য এর প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক।
বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় পাঁচটি দূষণ উপাদানের ওপর ভিত্তি করে। এগুলো হলো—বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (এনও২), কার্বন মনোক্সাইড (সিও), সালফার ডাইঅক্সাইড (এসও২) এবং ওজোন (ও৩)।
২০১৯ সালের মার্চে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া এবং নির্মাণ সাইট থেকে ছড়ানো ধুলা।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়।