
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম এখন অবস্থান করছেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখান থেকেই সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলের কোচ, ম্যানেজার, ফিজিও, অধিনায়কসহ কয়েকজন ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তোলেন তিনি।
ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর বিসিসি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে এসব অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু এবার যখন একজন ক্রীড়া সাংবাদিককে জাহানারা আলম ভিডিও সাক্ষাৎকার দেন এবং টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনের প্রতি যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুললেন, তখন টনক নড়েছে বিসিবির। এবার তারা পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানালো, বিসিবি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে।
তবে বিসিবির এই তদন্ত কমিটিতে আস্থা নেই জাতীয় পুরুষ দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের। এক বিশাল ফেসবুক স্ট্যাটাসে জাহানারার পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে স্বাধীন কমিটির দাবি তুলেছেন তিনি।
তামিম ইকবালের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘জাহানারা আলম যে অভিযোগগুলো তুলেছেন, সবগুলোই গুরুতর এবং সেসব সত্যি হলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।
শুধু একজন জাতীয় ক্রিকেটার বা সাবেক অধিনায়ক বলেই নয়, যে কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটার হোক বা যে কোনো খেলার ক্রীড়াবিদ কিংবা যে কোনো নারী, কারো প্রতিই এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিসিবি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বটে। তবে আমি মনে করি, এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কিংবা সরকারী পর্যায়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত, যেখানে বিসিবি সংশ্লিষ্ট কেউ থাকবেন না, যাতে বিন্দুমাত্র পক্ষপাতের সুযোগ না থাকে। যত দ্রুত সম্ভব এই কমিটি গঠন করা উচিত ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপারটিকে দেখা উচিত। দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত শেষ করে দোষী যে-ই হোক, যার যতটুকু দায় থাকুক, উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
কয়েকদিন আগে জাতীয় দলের পরিবেশ নিয়েও জাহানারা কিছু অভিযোগ করেছেন, যা বিসিবি পরে উড়িয়ে দিয়েছে। একজন ক্রিকেটার যখন দল নিয়ে এত গুরুতর অভিযোগ করেন, সেসব অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত। কিন্তু যাচাই না করেই বিসিবি যেভাবে অতি দ্রুত উড়িয়ে দিয়েছে, কখনোই তা কাম্য নয়।
জাহানারার অভিযাগের পর আরও বেশ কিছু ঘটনার কথা জানতে পারছি নানা মাধ্যমে। আমি প্রতিটি নারী ক্রিকেটারকে অনুরোধ করব, যারা নানা সময়ে এসব ঘটনার শিকার হয়েছেন, সেটা সরাসরি হোক বা আকারে-ইঙ্গিতে, যে কোনোভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছে, সবাই মুখ খুলবেন এবং সাহস নিয়ে এগিয়ে আসবেন।
দেশের ক্রিকেট তথা ক্রীড়াঙ্গনের স্বার্থে, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে এটা প্রয়োজন। কথা দিচ্ছি, আমাকে ও আমাদেরকে আপনাদের পাশে পাবেন।
জাহানারার অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা যদি না নেওয়া যায়, যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো মেয়ে ক্রিকেট বা যে কোনো খেলায় আসতে ভয় পাবে, খেলাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পিছপা হবে। আমরা সেটা হতে দিতে পারি না।’