ভারতের ওপর দিয়ে চলবে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের বিমান

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিল সংবেদনশীল। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও কূটনৈতিক সম্পর্কের নানা জটিলতায় এ সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে টানাপড়েনের মধ্যে ছিল। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সম্পর্ক উন্নয়নের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। এতে ধীরে ধীরে বাণিজ্য, পর্যটন ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু হতে যাচ্ছে।

ঢাকা ও করাচীর মধ্যে সরাসরি আকাশপথের যোগাযোগ তৈরি করার জন্য পাকিস্তানের বেসরকারি বিমান সংস্থা ফ্লাই জিন্নাহ অনুমতি পেয়েছে। পাকিস্তান সরকারের এই উদ্যোগ এক দশক পর দুই শহরের মধ্যে বিমান যোগাযোগ পুনরায় শুরু করবে। বর্তমানে, ঢাকা ও করাচী মধ্যপ্রাচ্যের ট্রানজিট দেশের মাধ্যমে একে অপরকে সংযুক্ত করলেও সরাসরি বিমান যোগাযোগের অভাব ছিল।

ফ্লাই জিন্নাহ পাকিস্তানের লাকসন গ্রুপ ও এয়ার এরাবিয়ার যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কম খরচের বিমান পরিষেবা সংস্থা । তাদের বিমান বহরে বর্তমানে ৬টি এয়ারক্রাফট রয়েছে, যা ১১টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে।

বাংলাদেশ বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানিয়েছে, ফ্লাই জিন্নাহর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে বিমান পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন তারা স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগ দেবে। তারপর স্লট ও ফ্রিকোয়েন্সি চাইলে তা বরাদ্দ দেবে বেবিচক। তবে কবে নাগাদ ফ্লাইট চালু হতে পারে সেই প্রশ্নে বেবিচক জানিয়েছে, এটি এয়ারলাইন্সটির সার্বিক কাজ সম্পন্নের ওপর নির্ভর করছে।

বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের এই নতুন অধ্যায় শুধু কূটনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যেও নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল সুতা-কাপড় ও প্রস্তুত চামড়া ছিল প্রায় ৭৯ শতাংশ।

বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার মূল্য ছিলো ৬ কোটি ডলারের সামান্য বেশি। মূলত কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা ও তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে সরাসরি জাহাজ চলাচলের সুযোগও শুরু হয়েছে করাচি ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে।

বাংলাদেশে পাকিস্তানের পণ্যবাহী জাহাজ আসা শুরু হয়েছে। দেশটি বাংলাদেশের জন্য ভিসা ফি বাতিল করেছে। এ ছাড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য দেওয়া হয়েছে ‘অন অ্যারাইভাল ভিসা’ সুবিধাও। এর অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশিরা এখন পাকিস্তানে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন।

পাকিস্তান জানিয়েছে, বাংলাদেশে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন, শিক্ষা, পর্যটন ও সিরামিক খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ রয়েছে। এমনকি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে ভিসা সহজীকরণেরও তাগিদ দিয়েছেন পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা।

ভারতের আকাশপথ ব্যবহার?

ঢাকা থেকে আকাশপথে করাচির দূরত্ব প্রায় ২ হাজার ৩৭০ কিলোমিটার। তবে এতদিন সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় এয়ারলাইন্সগুলোকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় ট্রানজিট নিয়ে যেতে হতো পাকিস্তানে। বর্তমানে এয়ার অ্যারাবিয়া, গালফ এয়ার, ফ্লাই দুবাই, এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, থাই এয়ারওয়েজসহ কয়েকটি এয়ারলাইনস বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে ট্রানজিট ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

যার ফলে যাত্রীরা ৮-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় ব্যয় করে। ট্রানজিট ফ্লাইটের কারণে ভাড়া গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকার বদলে প্রায় ১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে ভাড়া কমবে এবং যাত্রার সময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। একইসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সঙ্গে সংযোগ বাড়বে।

ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইটের রুটটি ভারতের আকাশপথ ব্যবহার করে চলতে পারে। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, লখনউ, নয়াদিল্লি ও রাজস্থানের ওপর দিয়ে যাবে। অন্যদিকে, যদি ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে করাচি যায়, তবে এটি পাঞ্জাবের পরিবর্তে রাজস্থান দিয়ে যাবে। তবে নিজেদের আকাশ পথ পাকিস্তানকে দেবে কিনা এই ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসেনি।

Share This Article