ভারতে তারাবির সময় মসজিদে ‘হামলা’, পুলিশ বললো ‘ঐতিহ্য’!

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

ভারতের মহারাষ্ট্রের রত্নগিরিতে একদল লোকের গাছের গুঁড়ি দিয়ে মসজিদের গেটে ধাক্কা মারার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বিতর্ক শুরু হয়েছে। সেখানে স্লোগান দেয়া এবং বেআইনি সমাবেশের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, গত ১২ মার্চ হোলি উৎসবের সময় কোঙ্কণ অঞ্চলে অনুষ্ঠিত বার্ষিক শিমগা শোভাযাত্রার সময় এই ঘটনাটি ঘটে বলে জানা গেছে। শোভাযাত্রাটি একটি মসজিদের গেটে পৌঁছালে কিছু লোক গাছের গুঁড়ি দিয়ে মসজিদের গেটে আঘাত করে এবং গেটটি ভেঙে ফেলে বলে অভিযোগ।

প্রতিবেদন মতে, দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই শোভাযাত্রাটি একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান ছিল, যা নিকটবর্তী একটি মন্দিরে শেষ হয়। ঐতিহ্য অনুসারে, এতে অংশগ্রহণকারীরা একটি লম্বা গাছের গুঁড়ি বহন করে এবং এটি মসজিদের সিঁড়িতে স্থাপন করা হয়। তবে এই বছর, কিছু ব্যক্তি মসজিদের গেটে ভাঙচুরের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ।

সংবাদমাধ্যম মুসলিম মিরর জানিয়েছে, হোলির আগের দিন পালিত শিমগা উৎসবের সময় মব পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হিন্দুত্ববাদী জনতা জোরপূর্বক রত্নগিরি মসজিদের গেট ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা করে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এ ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কিছু মানুষ বিশাল কাঠের কাঠামো দিয়ে মসজিদের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছে। গত বুধবার ওই মসজিদে তারাবির নামাজ চলাকালীন এই ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

সেখানে উপস্থিত পুলিশের সামনেই এ ঘটনা ঘটে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশের দাবি, মসজিদে জোর করে প্রবেশের ঘটনা ঘটেনি এবং তারা দ্রুত হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রত্নগিরির এসপি ধনঞ্জয় কুলকার্নি বলেন, রাজাপুরের ঘটনায়, বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে ঐতিহ্যবাহীভাবে শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত গাছের গুঁড়ি স্পর্শ করা হয়। মসজিদেও একই কাজ করা হয়েছিল। সুতরাং, মসজিদে কোনো আক্রমণ হয়নি; যেমনটি খবরে বলা হচ্ছে। কিছু যুবক স্লোগান তুলেছিল এবং আমরা এই বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেছি।

এই ঘটনা অনলাইনে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, রাজনৈতিক নেতারাও এতে সাড়া দিয়েছেন। কেউ কেউ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ দাবি করেছেন, গাছের গুঁড়ি দিয়ে ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মহারাষ্ট্রের বিধায়ক এবং শিবসেনা নেতা নীলেশ রানে এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেছেন, ঘটনাটি ‘অতিরঞ্জিত’। তার মতে, এই বছর মসজিদের গেট বন্ধ থাকার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এলাকায় সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার খবরও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

রানে আরও অভিযোগ করেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার মতো করে বিষয়টি চিত্রিত করার চেষ্টা করছে কিছু রাজনীতিবিদ এবং সংবাদমাধ্যম, যা ‘সত্য নয়’ এবং রত্নগিরির পরিস্থিতি ‘শান্তিপূর্ণ’।

এদিকে, এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, ঘটনার একটি ভিডিও শেয়ার করে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে জিজ্ঞাসা করেছেন, সরকার কি যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেবে?

এক্স বার্তায় তিনি লেখেন, মহাশয় দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, আইন কি তার নিজস্ব পথ অনুসরণ করবে? পুলিশের উপস্থিতিতে মসজিদে হামলা চালানো লজ্জাজনক।

Share This Article