রাজধানীতে ভূমিকম্পের সময় ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন রিকশাচালক আবু সিদ্দিক (৫৫)। মাথার খুলির একটি অংশ ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার রাতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেই অংশ আলাদা করে হাসপাতালে বিশেষভাবে সংরক্ষিত ফ্রিজে রাখা হয়েছে। এখনও তাঁর জ্ঞান ফেরেনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছেন এই রিকশাচালক। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আবু সিদ্দিকের খুলির ভেতরের অংশ ও রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়েছিল। অবস্থা স্থিতিশীল হতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগতে পারে। জ্ঞান ফেরার পর উপযুক্ত সময় দেখে খুলিটি পুনরায় প্রতিস্থাপন করা হবে।
শুধু পেটের দায়ে রিকশা চালানো গতকাল দুপুরে ঢামেকের আইসিইউর সামনে ওষুধ হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবু সিদ্দিকের ছেলে তাওহীদ ইসলাম। কাঁপা কণ্ঠে তিনি বলেন, বাবা প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকালেও রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লে বা একটু কিছু খাওয়ার সময় পেলেই কাছের কোনো হোটেলে বসে খেতেন। সেদিনও মিরবাগ এলাকার একটি টিনশেড হোটেলে খেতে বসেছিলেন। কে জানত, সেটাই বাবার জন্য মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়াবে।
তাওহীদ জানান, হোটেলের পাশেই সাততলা একটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছিল। ভূমিকম্পের সময় ভবনের ওপরের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে টিন ভেদ করে তাঁর বাবার মাথায় আঘাত করে। মানুষজন বলেছে, বাবা রক্তে ভিজে পড়ে ছিলেন। ১০-১৫ মিনিট পর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
জীবন থমকে গেছে পরিবারের আবু সিদ্দিকের চার সদস্যের পরিবার। তিনি রিকশা চালান, ছেলে তাওহীদ ও তাঁর স্ত্রী তাসলিমা আক্তার গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। কাজের সুবাদে পরিবার নিয়ে ঢাকা থাকে সবাই। হঠাৎ ঝড়ে ওলটপালট হয়ে গেছে তাঁর সংসার।
ঢামেকের আইসিইউর সামনে দাঁড়িয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা। চিকিৎসার খরচ জোগাড় করাও তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়া পোশাক কারখানায় দু-তিন দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে চাকরি যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাওহীদ বলেন, ভূমিকম্পে আহত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছে সরকার। তবে আমরা এখনও এই সহায়তা পায়নি।
বাঁচার লড়াইয়ে আবু সিদ্দিক
অস্ত্রোপচারের পর তাঁর খুলিটি বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। অবস্থার উন্নতি হলে ভবিষ্যতে সেটি পুনরায় প্রতিস্থাপন করা হবে এই আশায় অপেক্ষা করছে পরিবার।
ঢাকা মেডিকেলের নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ এফ এম মমতাজুল হক বলেন, এখনও ঝুঁকি কাটেনি আবু সিদ্দিকের। মাথায় সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে, তাই সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে তাঁকে। খুলি ফ্রিজে রাখা হয়েছে। যদি সুস্থ থাকে, দুই থেকে আড়াই মাস পর তা পুনঃস্থাপন করা হবে। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগবে।। ভর্তির পর থেকে আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।