শরীয়তপুরে একটি চলমান দেওয়ানি মামলার বিষয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগ উঠেছে এক বিচারকের বিরুদ্ধে। বাদীর অভিযোগ মামলাটির বিচারাধীন, অথচ রায় ঘোষণা না হলে সেটিকে রায় দেয়া হয়েছে এমন উল্লেখ করে গণমাধ্যমে তথ্য দিয়েছেন তৎকালীন ভেদরগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ মো. আরিফুল ইসলাম। আর এমন পরিস্থিতিতে চলমান মামলাটি সঠিক বিচারের প্রকৃয়ায় বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলেও আশংকা করেছেন বাদী সনিয়া আফরিন (কাজল)।
এনিয়ে রোববার (২ নভেম্বর) বিকেলে শরীয়তপুরের চিকন্দী ফুডপার্কে সংবাদ সম্মেলন করে এমন তথ্য জানিয়েছেন মামলার বাদী সনিয়া আফরিন (কাজল)।
মামলার নথি ও আদালত সূত্র জানায়, পৈত্রিক সম্পত্তির স্বত্ব ঘোষণাসহ বন্টন ও দলীল সংশোধন নিয়ে ২০২১ সালে ভেদরগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন গৈড্যা এলাকার মৃত আলহাজ্ব নবী বক্স মাঝির সন্তানরা। মামলাটির নম্বর ১৬৭/২০২১। মামলাটির বিচারক ছিলেন তৎকালীন বিচারক মো. আরিফুল ইসলাম। এদিকে ওই আদালতের বিচারকের প্রতি অনাস্থা থাকায় পরবর্তীতে মামলাটি সহকারী জজ ভেদরগঞ্জ আদালতে থেকে অন্য সহকারী জজ আদালতে প্রেরণ করার জন্য জেলা জজ আদালতে আবেদন করে বাদীপক্ষ। বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা জজ মামলাটির বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য সিনিয়র সহকারী জজ আদালত নড়িয়াতে প্রেরণ করেন। মামলাটির নিষ্পত্তির জন্য নড়িয়া আদালতে ২৯৬/২০২৫ নং মামলা হিসেবে রেজিষ্ট্রি হয়। রেজিষ্ট্রেশন হওয়ার পর থেকে এখন অবধি মামলাটি
চলমান রয়েছে। বাদী এবং বিবাদী উভয়পক্ষেই আদালতে উপস্থিত হয়ে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে গত ২৬ অক্টোবরসহ সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে দায়েরকৃত মামলা নিয়ে ‘মাথা গরম জেলা জজ’ ও ‘রায়ের কপি ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। যেখানে তৎকালীন ভেদরগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ মো. আরিফুল ইসলাম দাবী করেছেন মামলাটির রায় হয়েছে। অথচ বাদীর দাবী মামলাটি এখন পর্যন্ত চলমান। সেখানে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছেন ওই বিচারক।
মামলার বাদী সনিয়া আফরিন কাজল বলেন, যে মামলাটির রায় এখনও হলো না, সেই মামলার রায়ের কপি ছিঁড়ল কীভাবে? যে রায় হয়নি, সেই রায় নিয়ে বিভ্রান্তিকর মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করায় আমার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ওই বিচারক আমার মামলা নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। আমি আদালতে এসেছি ন্যায় বিচার পেতে। ন্যায় বিচার পাওয়ার স্বার্থে আমি আশা করবো, দেশের দর্পণখ্যাত গণমাধ্যম সত্যের পক্ষে থেকে সংবাদ পরিবেশন করবেন। আমি আদালত ও দেশবাসীর কাছে ন্যায় বিচার কামনা করছি, পাশাপাশি ওই বিচারকের শাস্তির দাবী করছি।
বিষয়টি নিয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী মহিউদ্দিন মোল্লা (শাহীন) বলেন, ১৬৭/২০২১ মামলাটি প্রথমে ভেদরগঞ্জ কোর্টে ছিলো। পরবর্তীতে বিবাদীর স্বাক্ষ্যগ্রহন অবস্থায় থাকাকালে ২০২৪ সালে আমি মামলাটি ট্রান্সফার করে নড়িয়া কোর্টে নিয়ে যাই। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে। বাদী এবং বিবাদী উভয়পক্ষ মামলাটি পরিচালনা করছেন। আগামী ২৬ সালের শুরুতে মামলাটির ধার্য তারিখ রয়েছে। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে বিবাদীর স্বাক্ষ্যগ্রহন অবস্থায় রয়েছে। এই স্টেজের পরে মামলার আর্গুমেন্ট হবে। তারপর রায়। এ পর্যন্ত মামলাটির রায় ঘোষণা হয়নি।
মামলাটির বিষয়ে বিবাদী পক্ষের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন খান বলেন, ১৬৭/২০২১ এই মামলাটি ২০২১ সাল থেকে আমার এখানে পরিচালনা করা হয়। বছরখানেক আগে আমার কাছথেকে ফাইলপত্র নিয়ে হাইকোর্টে চলে গেছে তারা। মামলাটি রায় হয়েছে কি না এই বিষয় তিনি বলেন, রায় হওয়ার প্রশ্নই উঠে না এটা সাক্ষ্য গ্রহণ চলছিলো। এই স্টেজের পরে মামলার আর্গুমেন্ট হবে। তারপর রায়। এ পর্যন্ত মামলাটির রায় ঘোষণা হয়নি।
বিষয়টি জানতে তৎকালীন ভেদরগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ মো. আরিফুল ইসলাম সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজি হয় নি।