মালয়েশিয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

malaysia news
মালয়েশিয়ার রাজধানী পুত্রাজায়ায় তিন দিনের সরকারি সফরে থাকা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শেহবাজ শরিফকে সোমবার রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। স্হানীয় সময় সকাল ১০টায় পুত্রাজায়ার পার্দানা পুত্রা কমপ্লেক্সে প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম ব্যক্তিগতভাবে শেহবাজ শরিফকে স্বাগত জানান। এসময় ১ম ব্যাটালিয়ন রয়্যাল মালয় রেজিমেন্টের তিন কর্মকর্তা ও ১০৩ জন সদস্যের একটি গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেন সফররত প্রধানমন্ত্রী।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শেহবাজ শরিফ তিন দিনের সরকারি সফরে মালয়েশিয়ায় রোববার দিবাগত রাত ৯টা ৪৬ মিনিটে তার বিশেষ ফ্লাইটটি কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কমপ্লেক্স বুংগা রায়ায় অবতরণ করে। এ সময় মালয়েশিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী দাতুক ফাহমি ফাদজিল তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান। এসময় শেহবাজ শরিফকে প্রদান করা হয় গার্ড অব অনার।

অনুষ্ঠানে উপপ্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ড. আহমদ জাহিদ হামিদি, মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা এবং দুই দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। সংবর্ধনা শেষে শেহবাজ শরিফ ভিজিটরস বুক-এ স্বাক্ষর করেন এবং পরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন।

দুই প্রধানমন্ত্রী বিদ্যমান সহযোগিতা পর্যালোচনার পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, হালাল শিল্প, শিক্ষা, পর্যটন এবং প্রতিরক্ষা খাতে নতুন সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবেন। এছাড়া আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও মতবিনিময় হবে।

সফরের অংশ হিসেবে পর্যটন, উচ্চশিক্ষা ও হালাল সার্টিফিকেশন খাতে মোট পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প উন্নয়ন সংক্রান্ত চুক্তি এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ নিয়ে নোট বিনিময় হবে।

মালয়েশিয়ার প্রতি বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, আনোয়ার ইব্রাহিমকে ‘SCRIPT: For a Better Malaysia’ বইটির উর্দু অনুবাদ সংস্করণ উপহার দেবেন।

১৯৫৭ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর ২০১৯ সালের মার্চে মালয়েশিয়া-পাকিস্তান কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হয়। ২০২৪ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮.০৭ বিলিয়ন রিঙ্গিত, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫.৫ শতাংশ বেশি।

মালয়েশিয়ার প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো পামতেল, পেট্রোলিয়াম ও রাসায়নিক দ্রব্য। অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে মালয়েশিয়া কৃষিপণ্য, টেক্সটাইল, পোশাক, জুতা ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য আমদানি করে থাকে।
মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের সম্পর্ক শুধু দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বা বিনিয়োগেই সীমাবদ্ধ নয়; এর রয়েছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ব।

একদিকে পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি এবং চীন–পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC)-এর অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। অন্যদিকে মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে আসিয়ান জোটে প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছে। দুই দেশের ঘনিষ্ঠতা তাই শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতা নয়, বরং বৃহত্তর মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

হালাল শিল্প, কৃষি–প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়ানো ইসলামিক দেশগুলোর জন্য নতুন সুযোগ উন্মোচন করবে। বিশেষ করে হালাল সার্টিফিকেশনে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা পাকিস্তানের বাজারে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।

আঞ্চলিক কূটনীতিতেও এই সম্পর্কের তাৎপর্য রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা, ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং বৈশ্বিক শক্তির পালাবদলের প্রেক্ষাপটে কুয়ালালামপুর ও ইসলামাবাদের ঘনিষ্ঠতা তাদের আন্তর্জাতিক কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই সফর শুধুমাত্র বাণিজ্য বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে আরও সমন্বিত অবস্থান তৈরি করতে সহায়তা করবে।



ভালো সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ ফিডটি অনুসরণ করুন


Google News

Share This Article