মা-মেয়েকে উত্যক্তের জেরে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে মাইকিং করে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

ঈদের পর হরিপুর-চিলমারি নির্মাণাধীন তিস্তা সেতুতে ঘুরতে যাওয়া মা-মেয়েকে উত্যক্তের ঘটনার জেরে এলাকায় মাইকিং করে নদী পাড়ের দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষের শতাধিক নারী-পুরুষ দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। কয়েক দফায় চলা সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের নারী-পুরুষসহ অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছেন।

এ সময় নদী পাড়ের বেশ কয়েকটি ঘর ভাঙচুর করে আগুন দেয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

আহতদের মধ্যে গুরুত্বর অবস্থায় আলমগীর হোসেন নামে একজনকে প্রথমে চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর থেকে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার (৪ এপ্রিল) চিলমারী রমনা ইউনিয়নের দক্ষিণ খরখরিয়া গ্রামের পশির উদ্দিনের মেয়ে ও স্ত্রী দ্বিতীয় তিস্তা সেতুতে ঘুরতে যায়। এ সময় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের শহরের মোড় এলাকার বিজয়, পাভেল ও সুমন নামের তিন যুবক তাদের গোপনে ছবি তোলেন এবং উত্যক্ত করার চেষ্টা করেন। পরে মা ও মেয়ে ঘটনার প্রতিবাদ করলে ওই যুবকরা তাদের সাথে অশোভন আচরণ করে।

এ ঘটনার সময় উপস্থিত চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ডাঙ্গার চর এলাকার হামেদ আলীর ছেলে সাজু ও রোস্তাম আলীর ছেলে মোতালেব মিয়া বিষয়টির প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিজয়, পাভেল ও সুমনসহ কয়েকজন মিলে সাজু ও মোতালেবকে মারধর করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়ে।

এরেই জেরে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে রমনা ইউনিয়নের দক্ষিণ খড়খড়িয়া এলাকার লাল মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৫) তার ভুট্টা ক্ষেত দেখতে যায়। এ সময় হরিপুর ইউনিয়নের শহরের মোড় এলাকার ফখরুলের ছেলেসহ কয়েকজন মিলে আলমগীর হোসেনকে বেধরক মারধর করে। পরে আলমগীর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় ব্যক্তিরা তার পরিবারকে ফোনে মারধরের বিষয়টি জানায়।

আলমগীর হোসেনের স্বজনরা জানায়, বেদম মারধরে আলমগীরের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমসহ ৫টি দাঁত ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া তার পায়ের নিচে টেঁটার আঘাত রয়েছে।

এদিকে, এ ঘটনায় দুই গ্রামের মানুষ মাইকিং করে তাদের লোকজনকে ডেকে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তিস্তা সেতুর দুই পাড়ের নারী-পুরুষের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে চিলমারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হলেও অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে সংঘর্ষের খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

বিষযটি নিশ্চিত করে চিলমারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুর রহিম জানান, ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরে খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থলে পুলিশ, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর একটি টিম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাইকিং করে পূর্ব পরিকল্পিত মারামারির বিষয়ে আমাদের কেউ কিছু বলেনি। এখন উভয় গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে।

এ বিষযে কুড়িগ্রাম সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন মো. সাফায়তে হোসেন বলেন, দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষের খবর পেয়ে দ্রুত আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পরে উভয় পক্ষের লোকজনকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়।

এদিকে, সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ঘটনার পর পুলিশ, প্রশাসন ও সেনাবাহীনির সদস্যরা উভয় পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিষয়টি সমাধানের প্রস্তাবে উভয় পক্ষের লোকজন রাজি হয়েছেন। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

Share This Article