ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২০২১ সালে ঢাকা সফরের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন হাফেজ মাওলানা মুফতি কোরবান আলী কাসেমী। ওই ইস্যুতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ডাকা হরতালের সমর্থনে রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস অফিসের গলি থেকে একটি মিছিলে অংশ নিয়ে বায়তুল মোকাররমে অবস্থান নেন তিনি। সেখানে সমাবেশ শেষে মোনাজাত করেন মুফতি কোরবান আলী। এতেই পতিত আওয়ামী সরকারের পুলিশ বাহিনীর রোষানলে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে গ্রেপ্তার হয়ে তিনটি মামলায় দীর্ঘ ১০ মাসের বেশি সময় কারাগারে কাটাতে হয় তাকে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির (তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব) ও হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি মুফতি কোরবান আলী। তিনি জানান, ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল রোজার সময় দুপুরে রাজধানীর সবুজবাগের কদমতলার বাসায় কোরআন তিলাওয়াত করছিলেন তিনি। এ সময় সেখানে ডিবি পরিচয়ে ৮-১০ জন হানা দেয়।
জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাকে ডিবি অফিসে যাওয়ার কথা বলেন তারা। বিকাল ৪টার দিকে মাইক্রোতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সন্ধ্যার দিকে ডিবি অফিসে খোঁজ নিলে সেখানে কোরবান আলী নামে কাউকে আনা হয়নি বলে জানানো হয়। এতে গুমের শঙ্কায় কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে অনলাইন পত্রিকায় তার গ্রেপ্তার খবর প্রচারের পর চিন্তামুক্ত হন তারা।
কোরবান আলী বলেন, গ্রেপ্তারের পর ডিবিতে নিয়ে ইফতারের আগেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। এ সময় তারা দলের আমির থেকে অন্য নেতাদের খোঁজখবর জানতে চান ও তাদের কাছে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু আমি তাদের বাসা না চেনার কথা বললে ডিবি সদস্যরা আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন। আলেমদের নাম নিয়েও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন তারা। পরে চোর-ডাকাতদের সঙ্গে এমন একটি সেলে রাখা হয় যেখানে ছিল মশা আর বদ্ধ পরিবেশ। পরদিন আদালতে উঠালে বিচারক আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা না করে সাত দিনের রিমান্ড দেন।
তিনি জানান, পল্টন থানায় রিমান্ড চলাকালে পুলিশ আলেমদের নামে আজেবাজে মন্তব্য করে এবং ইসলাম বিদ্বেষী প্রশ্ন করে। ১৯৭১ সালে কী ভূমিকা ছিল? ১৫ আগস্টে কী ভূমিকা ছিল? ইত্যাদি অযাচিত প্রশ্নের মাধ্যমে মানসিকভাবে কষ্ট দেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
তিনি বলেন, সাধারণ কয়েদিদের জন্য মোবাইলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু আলেমদের জন্য সেই সুযোগ নিষিদ্ধ করে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এতে কেন্দ্রীয় কারাগারে আসার পর প্রায় দুই মাস পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। পরিবারের লোকেরা নানাভাবে চেষ্টা করেও আমার কোনো খোঁজখবর পায়নি। আমি আসলে বেঁচে আছি কি না- সে খবরও পরিবার জানতে পারেনি।
কোরবান আলী বলেন, কাশিমপুর কারাগারে থাকা অবস্থায় আমার শ্বশুর ইন্তেকাল করেন। এ খবর পেয়ে কান্নাও করতে পারিনি। কান্না করতে দেখলে কারারক্ষীরা জেরা করবে, কীভাবে এ খবর জানতে পারলাম এবং মোবাইলে খবর পেয়েছি বুঝতে পারলে আরো নির্যাতন চালাবে।
তিনি বলেন, বাসাবো কদমতলার ‘হীরাঝিল জামে মসজিদে’ ১৯৯৭ সাল থেকে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কিন্তু গ্রেপ্তারের মাত্র ১৫ দিন পর সেই চাকরি চলে যায়। বন্ধ হয়ে যায় মাদরাসার বেতন। ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পেলেও ইমাম-খতিবের দায়িত্ব আর ফিরে পাইনি। মাদরাসার চাকরিতে যোগ দিলেও সামান্য বেতনে সংসার চালানো এখন বড় কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকারের নানা আশ্বাস সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে করা তিনটি মিথ্যা মামলা এখনো তুলে নেওয়া হয়নি। ফ্যাসিস্টমুক্ত পরিবেশে এ ধরনের আচরণ বড়ই দুঃখজনক বলে জানান তিনি।