প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, যারা সেই সময় (আওয়ামী শাসনামলে) দোসর ছিলেন তারা মবকে ভয় পাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: ইশতেহারে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শফিকুল আলম বলেন, আজকের বাংলাদেশে যে পরিমাণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানুষ ভোগ করছে, সেটি অতীতে হয়নি। কেউ কেউ বলেন, এখন নাকি ‘মবের ভয়’ আছে। কিন্তু আমি সেই ভয় দেখতে পাই না। যারা সেই সময় দোসর ছিল তারা মবের ভয় পাচ্ছেন। তারা হয়তো অতীতে অন্যায়ের অংশ ছিলেন, তাই তাদের মধ্যে সেই ভয় কাজ করছে। এখন আপনি যদি দোসর হয়ে থাকেন, আপনার পাপমোচন তো আমি করব না। সরকারের স্পষ্ট অবস্থান, কোনও সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকের ওপর হামলা সহ্য করা হবে না। গত ১৫ মাসে এমন কোনও ঘটনাও ঘটেনি। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় সরকার সবসময় সতর্ক থেকেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এমন একটি সময় ছিল, যখন সাংবাদিকতা পেশাটি ভয়াবহভাবে তলানিতে নেমে গিয়েছিল। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের আমলে সাংবাদিকতার মান, নীতি ও নিরাপত্তা—সবকিছুই প্রশ্নের মুখে পড়ে। সাংবাদিকদের গুম করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। আবার অনেকে ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে কলম চালিয়ে বৈধতা দিয়েছেন সেসব অন্যায়ের। অনেক সাংবাদিক সেই সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন—এটিও আমরা দেখেছি। আমরা এখন সেই অন্ধকার সময় থেকে বেরিয়ে আসছি।
রাজনৈতিক সরকারকে ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তিসহ (মিস-ইনফরমেশন) ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হবে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, এখন শুধু দুর্বল বা অনভিজ্ঞ সাংবাদিকই নয়, অভিজ্ঞ ও ভালো সাংবাদিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে অনেক সচেতন মানুষও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা খবর ছড়াচ্ছেন। সেইসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক বড় বড় ফিগার মিথ্যা বক্তব্য দিচ্ছেন। সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি। সরকার এই তথ্য বিভ্রাটের মোকাবিলা করবে কীভাবে? তাদের কাছে বলা যেতে পারে, কিন্তু তারা যদি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে সরকারের হাতে কার্যকর কোনও আইনি বা উপায় নেই। আমরা আগের সরকারের মতো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করতে চাই না।
মিসইনফরমেশন এখন শুধু বাংলাদেশের নয়, গোটা পৃথিবীর সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে কেউ যদি প্রকাশে কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে, সেটির শাস্তির কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেই। বিদেশে যেমন ক্ষতিপূরণের দৃষ্টান্ত তৈরি হয়, এখানে তা হয় না। ফলে মানুষ নির্ভয়ে ভুয়া খবর ছড়ায়।
প্রেস সচিব আরও বলেন, প্রিন্ট পত্রিকার পাঠক সংখ্যা এখন অনেক কম। সবাই এখন সামাজিক মাধ্যম থেকে সংবাদ গ্রহণ করে। এর ফলে তথ্য যাচাইয়ের সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে এবং সমাজকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে হলে সত্য ও মিথ্যা পার্থক্য করার দক্ষতা তৈরি করতে হবে। একইসঙ্গে, মানবাধিকারের মানদণ্ড মেনে মিথ্যা তথ্য মোকাবিলার আইনি ও প্রযুক্তিগত টুলস তৈরি করতে হবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কখনোই আগের মতো ‘ভিন্নমত দমন’ বা ‘সাংবাদিক গুম’-এর মতো সেই ভয়াবহ সময়ে ফিরে যেতে চাই না। কারণ কোনও সুস্থ সমাজে গুম, নির্যাতন বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনের চেয়ে বড় অপরাধ আর কিছু নেই।
সিজিএস সভাপতি জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ড. মওদুদ হোসাইন আলমগীর পাভেল, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, গণফোরাম সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, রাশেদ খান, মুশফিক উস সালেহীনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি।