যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য বাণিজ্য অংশীদার চীন: শি জিনপিং

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পৌঁছান শি জিনপিং।

মালয়েশিয়ায় পা রেখেই শি জিনপিং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য বাণিজ্য অংশীদার হচ্ছে চীন।’ বেইজিং-ওয়াশিংটনের সঙ্গে তুমুল বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যেই এমন মন্তব্য করলেন চীনা প্রসিডেন্ট।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

খবরে বলা হয়, এই সফরকে বিশ্লেষকরা দেখছেন বেইজিংয়ের একটি কৌশলগত বার্তা হিসেবে, যেখানে চীন নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় আরও বিশ্বস্ত ও দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছে—বিশেষ করে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তীব্র বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে।

মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বার্নামা জানায়, শি জিনপিং আরও বলেন, “চীন ও মালয়েশিয়ার মধ্যে উচ্চপর্যায়ের কৌশলগত সহযোগিতা আরও গভীর হলে তা কেবল দুই দেশের জন্যই নয়, গোটা অঞ্চল এবং বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য উপকারী হবে।”

মালয়েশিয়ায় এটি তার ২০১৩ সালের পর মালয়েশিয়ায় প্রথম সফর। এর আগে তিনি ভিয়েতনামে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তি খাতে চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যার মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রেল অবকাঠামো উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য।

শি জিনপিংয়ের এই সফর ও তার কৌশলগত বার্তাটি এমন সময়ে আসলো, যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ান-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ নিয়ে অসন্তুষ্ট। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বব্যাপী একতরফাভাবে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করেছে, যার ফলে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মালয়েশিয়ার সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও আইন বিষয়ক মন্ত্রী দাতুক সেরি মোহাম্মদ নাজরি আব্দুল আজিজ বলেন, “এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি সফর। এর ভেতরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা লুকিয়ে আছে।”

তিনি বলেন, “চীন আমাদের বোঝাতে চাইছে যে তারা একটি নির্ভরযোগ্য বাণিজ্যিক অংশীদার—যুক্তরাষ্ট্রের মতো অনির্দেশ্য নয়। আমাদের কখনও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে সমস্যা হয়নি।”

“প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া চীনের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে, যা আমাদের জন্য ইতিবাচক,” তিনি যোগ করেন। “দীর্ঘমেয়াদে, আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব এই অঞ্চলে কমে আসবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা এখন চীনের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছি—এটাই আমাদের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি।”

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়ার ওপর ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, অভিযোগ করেছে যে মালয়েশিয়া তাদের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ হারে শুল্ক নিচ্ছে—যা মালয়েশিয়া অস্বীকার করেছে।

সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত সর্বোচ্চ শুল্কে ৯০ দিনের জন্য বিরতি ঘোষণা করেছেন, যার ফলে তারা আপাতত ১০ শতাংশ হারে শুল্ক দিচ্ছে। তবে চীনের জন্য এই ছাড় নেই—তাদের পণ্যের ওপর এখনও ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

Share This Article