
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর কঠোর নজরদারি ও ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বিশেষ করে ভারতের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইএলএ)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংগৃহীত ৩২৭টি সাম্প্রতিক ভিসা বাতিলের প্রায় অর্ধেকই ভারতের শিক্ষার্থী।
এআইএলএ-এর ‘The Scope of Immigration Enforcement Actions Against International Students’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাতিল হওয়া ভিসার ৫০ শতাংশ ভারতের, ১৪ শতাংশ চীনের। দক্ষিণ কোরিয়া, নেপালের কিছু শিক্ষার্থীরাও তালিকায় রয়েছেন।
গত চার মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বিদেশি শিক্ষার্থীদের কার্যকলাপ, ডেটা ও সোশ্যাল মিডিয়া তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করছে। অনেকে দাবি করছেন, এসব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে হচ্ছে, ফলে ভুল চিহ্নিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
গত মার্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ‘ক্যাচ এন্ড রিভোক’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর আওতায় শিক্ষার্থী ভিসাধারীদের সোশ্যাল মিডিয়া কার্যক্রমও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ‘ইহুদি বিদ্বেষ’ বা ফিলিস্তিন-হামাসের প্রতি সমর্থনের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান রুবিও।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এসইভিআইএস পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, ৪৭৩৬ জন শিক্ষার্থীর ভিসা স্ট্যাটাস বাতিল করা হয়েছে, যাঁদের বেশিরভাগই F-1 ভিসাধারী।
এআইএলএ জানায়, মাত্র ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ইমেইলের মাধ্যমে ভিসা বাতিলের নোটিশ পেয়েছেন, আর ২ জন ছাড়া বাকি কারও বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার প্রমাণ নেই। অনেকেই কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভিসা বাতিলের বিষয় জানতে পেরেছেন। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি।
এআইএলএ এই প্রশাসনিক পদক্ষেপকে “নজিরবিহীন” বলেছে এবং এতে আইনি জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
বাতিল হওয়া ভিসার অর্ধেক শিক্ষার্থী স্নাতক শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ১২ মাস কাজ করার সুযোগ পেতেন। ফলে চাকরিচ্যুতি ও দেশে ফেরার চাপ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, মিশিগান ও অ্যারিজোনা।
এদিকে এপি জানায়, মার্চের শেষদিকে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বা আইনি মর্যাদা বাতিল হয়েছে। এর বেশিরভাগই ভারত ও চীনের নাগরিক। তবে আইনজীবীরা বলছেন, এই পদক্ষেপ শুধু কোনো নির্দিষ্ট দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা বিষয়টি অবগত, কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের F-1 ভিসা স্ট্যাটাসের বিষয়ে বার্তা পেয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং আমাদের দূতাবাস ও কনস্যুলেট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।’