বাগেরহাট প্রতিনিধি।।
বাগেরহাটে ব্যাংক এশিয়ার একটি এজেন্ট শাখায় ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাগেরহাট সদর’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল গত বছরের নভেম্বরে। ওই অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছিল সুমি বেগম নামে এক নারীর পরিচয়পত্র ব্যবহার করে। তবে ওই নারীর সঙ্গে বাগেরহাট সদর উপজেলা প্রশাসনের কোনো সম্পর্ক নেই। রহস্যজনক ওই অ্যাকাউন্ট নম্বরে চার মাসে প্রায় কোটি টাকার লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইউএনও অফিস ও ব্যাংকের অসাধু কর্তাদের যোগসাজশে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
ইউএনও পদ ব্যবহার করে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত না করে রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন। ওই অ্যাকাউন্ট নম্বর পরিচালনাকারী ব্যক্তি ও সেখানে লেনদেনে জড়িতদের পরিচয় কিংবা অপরাধের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।
অ্যাকাউন্টের বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাগেরহাট সদর’ নামে ১০৮৩৩০১০০১৯৬৮ নম্বর অ্যাকাউন্টটি চালু করা হয়। এর একদিন পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি চেকের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের ৪৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা জমা হয় অ্যাকাউন্টে। পরবর্তী কয়েকদিনের মধ্যে ওই নম্বর থেকে প্রায় সব টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপরে আবার চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৬টি ধাপে ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ওই অ্যাকাউন্টে জমা হয়। অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে সেখানে ১০১ টাকা জমা রয়েছে।
সুমি বেগম নামের যে নারীর পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়, অনুসন্ধান করেও সন্ধান মেলেনি তার। পরিচয়পত্রে সূত্র ধরে খুলনার রূপসার চর রূপসা এলাকায় এই প্রতিবেদক সরেজমিনে দিনভর বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলেও সুমি বেগম নামে কাউকে খুঁজে পাননি।
ব্যাংক এশিয়ার খুলনা শাখা সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাটের একটি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা থেকে ওই অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে। এটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বাগেরহাটে ব্যাংক এশিয়ার দায়িত্বরত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রতিনিধি মামুনুর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সমকাল প্রতিবেদককে জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ফকিরহাটের ফলতিতা বাজারে দেখা করতে বলেন। নির্ধারিত সময়ে সেখানে গেলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। দীর্ঘ সময় ওই বাজার ও স্থানীয় এজেন্ট শাখায় অপেক্ষা করলেও আসেননি তিনি। পরে কল দিলে তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করতে অপারগতা জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এজেন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে অভিযুক্ত এজেন্ট ও জড়িতদের পরিচয় জানাতে রাজি হননি তিনি।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বাগেরহাট সদর উপজেলা ইউএনও কার্যালয়ে গেলে ওই অ্যাকাউন্ট ও অস্বাভাবিক এসব লেনদেনের তথ্য দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ (তিনি এক সপ্তাহ আগে পদোন্নতি পেয়ে খুলনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছেন)। দীপংকর দাশ বলেন, প্রশাসনের কারও যোগসাজশ ছাড়া সম্ভব নয় এমন কাজের।
জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টির সমাধান হয়ে গেছে । রাষ্ট্রের কোনো অর্থ খোয়া যায়নি। তবে কী ধরনের সমাধান এবং কে বা কারা ওই অ্যাকাউন্ট পরিচালনা ও লেনদেনে জড়িত ছিল জানতে চাওয়া হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।