
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে রাশিয়া সফরে গিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। মূলত, তার মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্ পুতিনকে একটি চিঠি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনা সম্পর্কে ক্রেমলিনকে জানানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ওমানে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন ও ইরানের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। উভয় পক্ষই আলোচনা ইতিবাচক ও গঠনমূলক হয়েছে বলে জানিয়েছে। এ সপ্তাহের শেষ দিকে রোমে দ্বিতীয় দফা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে তার ‘সর্বোচ্চ চাপ’ কৌশল পুনর্বহাল করেছেন, যার লক্ষ্য দেশটির ক্রুড অয়েল রফতানি শূন্যে নামিয়ে আনা এবং পরমাণু অস্ত্র অর্জন বন্ধ করা।
তবে, তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং জোর দিয়ে বলেছে যে দেশটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার আলোচনার বিষয় নয়।
গত মাসে, ট্রাম্প ইরানকে হুমকি দিয়েছিলেন যে যদি তারা তাদের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের সাথে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তবে তিনি ইরানে বোমা হামলা চালাবেন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের শুল্ক আরোপ করবেন।
এদিকে, রাশিয়া বলেছে যে ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক হামলা ‘অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য’ হবে। তেহরানের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে, পশ্চিমের সাথে ইরানের পরমাণু আলোচনায় মস্কো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তেহরানের দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়া ইরানের পরমাণুবিষয়ক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ, রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী। যে চুক্তি থেকে ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন যে রাশিয়া এই দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে সহায়তা চালিয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি, ইরান যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করেছে তা প্রয়োজনের মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। এ পরিমাণ পারমাণবিক বোমা তৈরির উপযোগী মাত্রার কাছাকাছি। তবে ইরান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সতর্ক করে বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
গ্রোসি ফরাসি সংবাদপত্র লে মন্ডেকে তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি থেকে খুব বেশি দূরে নয়’।
আইএইএ’র সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান ৬০% সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০% সমৃদ্ধির খুব কাছাকাছি।
ইরান ইতিমধ্যে ৪২ কেজি উচ্চ-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করেছে, যা একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংস্থাটি ইরানের কিছু পারমাণবিক স্থাপনায় পর্যাপ্ত পরিদর্শনের সুযোগ না পেয়ে স্বচ্ছতার অভাবের কথাও উল্লেখ করেছে।