রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও মাসে মাত্র ২০ হাজার আফগানি বেতন!

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কাবুল

আফগানিস্তানের ইসলামী ইমারাতের সর্বোচ্চ নেতা ও রাষ্ট্রপ্রধান শাইখ হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার ব্যক্তিগত জীবনযাপন এবং ইমারাতের বর্তমান নীতি সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ। আফগান সংবাদমাধ্যম আফাক নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।

মুজাহিদ বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান আখুন্দজাদার বয়স বর্তমানে ৫৯ বছর। অন্যান্য আফগান নাগরিকদের মতোই তিনি অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করেন। মাসিক মাত্র ২০ হাজার আফগানি বেতনের ওপর নির্ভর করেই তিনি জীবনধারণ করেন। রাষ্ট্রের প্রধান হয়েও তাঁর ব্যক্তিজীবনে কোনো বিলাসিতা নেই। দিন-রাত প্রায় পুরো সময়ই তিনি দেশের কাজে ব্যয় করেন। ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত সভা, সফর ও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে তিনি সক্রিয় থাকেন। সংক্ষিপ্ত বিশ্রাম ছাড়া তাঁর জীবন মূলত রাষ্ট্রের সেবায় নিবেদিত।

জাতীয় স্বার্থ সর্বাগ্রে

সাক্ষাৎকারে জাতীয় সংলাপ প্রসঙ্গে জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ইসলামী ইমারাতের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো দেশের জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের কল্যাণ। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে—জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, “আমাদের জন্য ব্যক্তি নয়, জাতির স্বার্থই মুখ্য। রাষ্ট্রদ্রোহ, বিশৃঙ্খলা বা অতীতের বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সক্রিয় হওয়ার সুযোগ তৈরি করে এমন সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করব না।”

প্রাক্তন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভূমিকা

প্রাক্তন গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিবিদদের দেশে ফেরার বিষয়েও মুজাহিদ অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে রাজনৈতিক বিভাজন আফগানিস্তানকে সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে বর্তমানে জাতীয় ঐক্য ও জনগণের কল্যাণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এসব রাজনীতিবিদ দেশে ফিরে অন্য নাগরিকদের মতো শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। তবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া দেশের স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য ক্ষতিকর হবে।

মুজাহিদ বলেন, “যদি কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করে বিভাজন বা বিশৃঙ্খলা ছড়ায়, তবে তা দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে। আজ ঐক্যের জন্য দারুণ সুযোগ এসেছে। সকলকে ইসলামি ব্যবস্থার ছায়ায় একত্রিত হয়ে জাতীয় স্বার্থে কাজ করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থ নয়।”

সামরিক সরঞ্জাম ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি

ইসলামী ইমারাতের মুখপাত্র প্রাক্তন সরকারের রেখে যাওয়া সামরিক সরঞ্জাম সংরক্ষণের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান, বাগরাম বিমানঘাঁটিতে কোনো বিদেশি বাহিনী অবস্থান করছে না। পুরো ঘাঁটি এবং এর সব সুবিধা এখন ইসলামী ইমারাতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, বর্তমানে আফগানিস্তানের কোথাও কোনো বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় নেই। দেশের ভেতরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে ইসলামী ইমারাতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।


বিশ্লেষণ

জাবিহুল্লাহ মুজাহিদের এই সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট হয়েছে, আফগানিস্তানের বর্তমান শাসনব্যবস্থা জাতীয় স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। সর্বোচ্চ নেতা আখুন্দজাদার সাধারণ জীবনযাপনকে সামনে তুলে ধরে ইসলামী ইমারাত নেতৃত্বকে জনবান্ধব ও ন্যায়নিষ্ঠ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে। তবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রাক্তন নেতাদের অংশগ্রহণ না করার যে শর্ত আরোপ করা হয়েছে, তা ভবিষ্যতে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত।

Share This Article