
লেবু নিয়ে বিপাকে নাটোরের কৃষকরা। শুধু নাটোর নয়, উত্তরাঞ্চল সহ দেশের সব জায়গার বাগানীরাই রয়েছেন বিপাকে।
লেবুর ভরা মৌসুম এখন। নাটোরে’র বাগান গুলোতে প্রচুর পরিমাণে এসেছে লেবু। কিন্তু এতো লেবু থাকা সত্ত্বেও লেবু চাষীদের মুখে নেই হাঁসি।
আর হাঁসি না থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা বাগান ভর্তি লেবু থাকলেও পানির দামেও বিক্রি হচ্ছে না এই লেবু। আর তাই বাগানের বেশিরভাগ লেবু পেকে বাগানেই পচে নষ্ট হচ্ছে। অন্যান্য সময় বাগানে বাগানে ঘুরে লেবু কিনতে দেখা যেতো ফরিয়াদের। আর এখন তাদেরও দেখা নেই! কিছু কৃষকদের পরিচিত ব্যাপারীদের বাগান পর্যন্ত আনতে পারলেও তারা লেবু কিনছেন বস্তা চুক্তি। দেখা যায় একটি বস্তায় লেবু আটে অন্তত ১৫০০ পিস। বিনিময় দাম পাওয়া যায় মাত্র ৩০০-৪০০ টাকা। এক লেবু চাষী বলেন, বাগানে এমন দাম দেখে একদিন লেবু তুলে নিয়ে যাই বাজারে। সেখানে লেবু বিক্রি করে দেখি উঠছে না লেবার খরচ।
কিন্তু বছরখানেক আগেও পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। সেসময় করোনার প্রভাবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মানুষ লেবুর উপরে চাহিদা বাড়ায়, যারা লেবু কিনেন না বললেই চলে তারাও কিনতে শুরু করলেন। এর পর আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেতে থাকে লেবুর দাম এক পর্যায়ে গত বছরের এপ্রিলে ঢাকার কাওরান বাজারে হালি প্রতি লেবু বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা (৪ পিস)।
রাজধানীর এ বাজার শুধু রাজধানীতেই আটকে থাকেনি রাজধানী পেরিয়ে মফস্বল বা উপজেলার ছোট শহর গুলোতেও যথেষ্ট উৎপাদন থাকার পরও টিভির খবর, হুজুগ ও গুজবে খুচরা ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা মতো দর আদায় করেছেন ভোক্তাদের থেকে।
তবে বছর পেরুতেই পরিস্থিতি পুরো উল্টো। এখনও রাজধানীতে কেজি দরে লেবু বিক্রি না হলেও, রাজশাহীর পুঠিয়ায় ও নওগাঁর উপজেলা শহরে লেবু বিক্রি হয়েছে কেজি দরে (সোর্স সোশ্যাল মিডিয়া)। লেবুর ভরা মৌসুমে দাম একটু কম থাকা স্বাভাবিক। তবে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কৃষকরা অতীতে কখনো হননি।
এবিষয়ে নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোঃ ইয়াছিন আলী বলেন, “নাটোর বিভিন্ন ফল সমৃদ্ধ একটি জেলা। যেখানে প্রায় ৩৮৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের লেবুর চাষ হয়। এখন লেবুর সিজন চলছে তাই দাম একটু কম তবে অফ সিজনে এর ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই আমরা কৃষকদের কে পরামর্শ দেই লেবুর সিজন আসার আগত সময়ে বাগানের ফুল গুলো পুডিং করে ফেলে দিতে। যাতে সিজনে ফল কম আসে আর অফ সিজনে ফল বেশি আসে।”
দেশের বাহিরেও লেবুর চাহিদা রয়েছে। দেশের সিজনের লেবু গুলো বিদেশে রপ্তানি করার চিন্তাভাবনা বা কোন পরিকল্পনা কি আপনাদের রয়েছে?
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে আমসহ বিভিন্ন ফল ও সবজি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। যেহেতু লেবু ইদানিংকালে বেশি উৎপাদন হচ্ছে তাই আমরা চেষ্টা করবো মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ লেবু বিদেশে রপ্তানি করার। তবে এখন পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া আমরা শুরু করতে পারিনি।”
এবিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কলেজ নাটোর এর প্রভাষক (কৃষি) মোঃ পারভেজ রানার সাথে আমরা কথা বলেছি। তিনি বলেন,
“শুধু লেবু নয় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফল- ফসলের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কৃষি অর্থনীতির ভাষায় উৎপাদন বাড়লে দাম কমে আর উৎপাদন কমলে দাম বৃদ্ধি পায়।
যেমনটি বর্তমানে আমরা লেবুর ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি।
এ থেকে বের হয়ে আসতে কৃষিকে আমাদের বহুমুখীকরন করতে হবে। যাতে আমরা শুধু একটি চাষের প্রতি নির্ভরশীল না হই।”
লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল ফল যার চাহিদা পুরো বিশ্বই রয়েছে। বাংলাদেশের এই লেবু যদি বিদেশে রপ্তানি করা যায় তাহলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও লেবু চাষীদের ভাগ্যের পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মত কৃষি বিশেষজ্ঞদের।