
বহু বছরের আইনি লড়াই ও বিতর্কের পর থাইল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা এখন থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজেদের হেয়ারস্টাইল বেছে নিতে পারবে।
বুধবার (৬ মার্চ) দেশটির সুপ্রিম অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৫০ বছর পুরোনো নির্দেশনা বাতিল করে, যা এতদিন শিক্ষার্থীদের চুলের ধরন নিয়ন্ত্রণ করত। শুক্রবার (৭ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালে সামরিক জান্তা সরকার একটি নির্দেশনা জারি করে, যেখানে বলা হয়েছিল, স্কুলে ছেলে শিক্ষার্থীদের চুল ছোট রাখতে হবে এবং মেয়েদের কান পর্যন্ত বব কাট দিতে হবে।
যদিও সময়ের সঙ্গে কিছু স্কুলে এই নিয়ম শিথিল করা হয়েছিল, তবে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো পুরনো নিয়ম মেনে চলছিল। কিছু স্কুলশিক্ষার্থীদের বাধ্য করত নিয়ম মানতে, এমনকি নিয়ম না মানলে শিক্ষকদের হাতে প্রকাশ্যে চুল কেটে দেওয়ার মতো অপমানজনক শাস্তির মুখে পড়তে হতো শিক্ষার্থীদের।
৬ মার্চ থাই আদালত তার রায়ে জানিয়েছে, ১৯৭৫ সালের এই নির্দেশনা সংবিধানে স্বীকৃত ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থি এবং আধুনিক সমাজের সঙ্গে বেমানান। ২০২০ সালে ২৩ জন সরকারি স্কুল শিক্ষার্থী আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করে, যেখানে তারা যুক্তি দেখায় যে, এই নিয়ম শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে।
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কর্মীরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন যে, এই নিয়ম তাদের মানবিক মর্যাদা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতাবিরোধী। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম কর্মী পান্তিন আদুলথানানুসাক বলেন, আমরা জানতাম এটি কঠিন, কিন্তু কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। যদি শিক্ষার্থীরা কখনো এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে না দাঁড়াত, তাহলে এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক ব্যাপার হয়ে থাকত।
এর আগে ২০২০ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে থাইল্যান্ডের শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়ম কিছুটা শিথিল করে। নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, ছেলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা বড় চুল রাখতে পারবে, তবে তা ঘাড় পর্যন্ত নামতে পারবে না। অন্যদিকে, মেয়েরা লম্বা চুল রাখতে পারবে, তবে তা বাধ্যতামূলকভাবে বাঁধতে হবে।
এরপর ২০২৩ সালে শিক্ষামন্ত্রী ত্রিনুচ থিয়েনথং এই বিধিনিষেধ পুরোপুরি তুলে নেন এবং বলেন, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্কুল প্রশাসনের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে হেয়ারস্টাইল নির্ধারণ করা উচিত। তবে অনেক স্কুল এখনো ১৯৭৫ সালের পুরোনো নির্দেশিকা অনুসরণ করছিল।
এদিকে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে থাইল্যান্ডে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন একটি যুগের সূচনা হলো। আদালত জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের হেয়ারস্টাইল নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ও মর্যাদা বিবেচনায় নিতে হবে। যদিও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে নিজেদের নিয়ম ঠিক করে নিতে পারে, তবে এটি শিক্ষার্থীদের অধিকারের ক্ষেত্রে একটি বড় বিজয় বলে মনে করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নেতা পান্তিন বলেন, আমি আনন্দিত যে আমরা বিষয়টি নিয়ে লড়ছিলাম, তা স্বীকৃতি পেল এবং বাস্তব অগ্রগতি হলো। আমি আশা করি, এই রায় স্কুলে মৌলিক মানবাধিকারের নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।
এই রায়ের ফলে থাইল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থায় আরও উদার এবং আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।