বরিশাল নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ইন্দ্রকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া সুলতানাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। ওই প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি পাওয়ায় তাকে বদলি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী শাস্তিমূলক বদলি নিজ জেলার বাইরে হওয়ার কথা থাকলেও তাকে তার নিজ বাসার পাশে মুকুল স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক নিলুফার ইয়াসমিনের সুপারিশে শাস্তিমূলক এ বদলির নামে ওই শিক্ষিকাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই দপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
তবে প্রাথমিক শিক্ষা-বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক নিলুফা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিজ ক্ষমতা বলে এমন কাজ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাথমিক শিক্ষা বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালকের দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, তানিয়া সুলতানা নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজের বান্ধবী হিসেবে বরিশালে পরিচিত। চলতি বছরের জুন মাসে বিদ্যালয়ের নিজ কক্ষে কিছু অপরিচিত ব্যক্তিকে নিয়ে সভা করছেন—এমন বিষয়টি ওই ওয়ার্ডেও বিএনপি নেতাদের জানান স্কুলের শিক্ষকরা।
ইন্দ্রকাঠি সরকারি প্রাখথমিক বিদ্যালয়ের পাশের বাসিন্দা ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘জুন মাসে আমরা ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে জানতে পারি তার কক্ষে আওয়ামী লীগের অনেক নেতারা যাতায়াত করেন। একই সঙ্গে কক্ষের অভ্যন্তরেও পলাতক শেখ হাসিনা ও তার বাবার ছবি টাঙানো রয়েছে। একটি বস্তায় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী নামক বেশকিছু বই রয়েছে—এ অভিযোগ পাওয়ার পরে স্থানীয়দের নিয়ে সেখানে গিয়ে ওই ছবি তাকে দিয়ে নামিয়ে নিই। সেই সঙ্গে বস্তাভর্তি বইগুলোসহ কক্ষে তালা দিই।’
তিনি বলেন, ‘পরে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আল-মামুন ঘটনাস্থলে আসেন। তার উপস্থিতিতে কক্ষের তালা খুলে দিই। তিনি ছবি ও বইগুলো নিয়ে যান। এরপর জানতে পারি ওই শিক্ষক তার বাসার সঙ্গে নগরীর হাসপাতাল সড়কে মুকুল স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। তবে বিষয়টি তিনি গোপন রেখেছেন।
আমরা রবিবার ওই স্কুলে গিয়ে তাকে পাইনি। উপজেলা অফিসে মিটিংয়ে গেছেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজের পরিচয়ে বেশ দাপুটে ছিলেন ওই শিক্ষক। তাকে বরিশালে চাকরি করতে দেওয়া হবে না।’
তদন্তকারী কর্মকর্তা বরিশাল সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (বর্তমানে ঝালকাঠি কর্মরত) আল-মামুন বলেন, ইন্দ্রকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক তানিয়া সুলতানার বিষয়টি তদন্তে গিয়েছিলাম। বই ও ছবি পাওয়ার ঘটনাটি সত্য। আমি প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করেছি। এরপর বিভাগীয় উপপরিচালক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় কি ব্যবস্থা নিয়েছে, তা আমার জানা নেই।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া সুলতানা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি পুরো ঘটনা প্রাথমিক শিক্ষা বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানিয়েছে। তারা জেনে বুঝে আমাকে এখানে পদায়ন করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, তানিয়া সুলতানার বিষয়টি আমরা মহাপরিচালককে জানিয়েছি। ওই শিক্ষক নিজেও মহাপরিচালককে সব জানিয়েছে। তারপর মহাপরিচালকের নির্দেশে তাকে ইন্দ্রকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মুকুল স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। এখানে আমার কিছুই করার নেই।