সংযুক্ত আরব আমিরাতে দৃষ্টিনন্দন আন্তর্জাতিক মানের শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ

সংযুক্ত আরব আমিরাতে দৃষ্টিনন্দন আন্তর্জাতিক মানের শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ

শাহিন মিয়া, আরব আমিরাত ( ডুবাই ) প্রতিনিধি ::

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে বড় উপাসনায় শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। মসজিদটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে অবস্থিত। এই মসজিদের নামকরন করা হয়েছে আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামানুসারে।

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ শুধু আরব-আমিরাতের সবচেয়ে বড় মসজিদই নয়, পৃথিবীর সুন্দরতম মসজিদগুলোর ভেতরেও শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ অনন্য। এই মসজিদের আঙিনায় রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ফুটের মার্বেল মোজাইক। এটিই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ আয়তনের মার্বেল মোজাইক। এই মসজিদের প্রধান প্রার্থনা কক্ষে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম গালিচা। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই কার্পেটের আয়তন ৬০ হাজার ৫৭০ বর্গ ফুট। এই কার্পেটের ওজন ৩৫ টন।

আবুধাবির জাঁকজমকপূর্ণ এই মসজিদটি তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। প্রায় ৫৪৫ মিলিয়ন ডলার এবং ১২ বছর সময় লাগে এর কাজ শেষ করতে। বর্তমান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এই মসজিদটির আয়তন ২২ হাজার ৪১২ বর্গমিটার। যা প্রায় চারটি ফুটবল মাঠের সমান।

একসঙ্গে এই মসজিদে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নামাজ পরতে পারেন। এছাড়াও বৃহত্তম হাতে বোনা কার্পেট, বৃহত্তম ঝাড়বাতি এবং বৃহত্তম গম্বুজের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে রয়েছে এই মসজিদের নামে।

শেখ জায়েদ মসজিদের সৌন্দর্য দেখে যে কারও মুখ হা হয়ে যাবে এটি নিশ্চিত। ৮২টি সাদা মার্বেলের গম্বুজ, বাইরের ১ হাজার ৯৬টি কলাম, ভেতরের ৯৬টি মণি খচিত কলাম এবং ৭টি ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ খচিত ঝাড়বাতি আপনাকে বাধ্য করবে এর সৌন্দর্যের প্রেমে পড়তে।

বিশ্বমানের ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩ হাজার কর্মী এই মসজিদটি তৈরিতে কাজ করেছেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম রাষ্ট্রপতি প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামানুসারেই এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে। তিনিই এই মসজিদ করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

এই মসজিদ নির্মাণের স্থাপত্য বিষয়ক নির্দেশনা তারই ছিলো। তিনি তার সমাধি এই মসজিদে করার ইচ্ছা পোষণ করেন। ২০০৪ সালে তিনি মারা গেলে মসজিদ চত্বরে তাকে সমাহিত করা হয়।

দর্শনীয় এই মসজিদটির স্থপতি ইউসুফ আবদেলকি। তিনি সিরিয়ার নাগরিক। পারস্য, মোঘল এবং মরিশ স্থাপত্যশৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এই নকশা করেন। ব্রিটিশ শিল্পী ও চিত্রকর কেভিন ডিন মসজিদের ভেতরের ফুলের নকশাগুলি করেছিলেন। একে তিনি জীবন বদলে দেওয়া অভিজ্ঞতা হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

মসজিদটি দেখার জন্য কোনো টিকিট কাটতে হয় না। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য এটি খোলা থাকে। রাত ৯টার পরে আর কোনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারেন না। এই সময়সূচীর ব্যতিক্রম হয় শুধু শুক্রবারে। শুক্রবারে জুমার নামাজের দিকে খেয়াল রেখে এদিন দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় বিকাল সাড়ে চারটা থেকে।

কোনো প্রকার ফি ছাড়াই একজন গাইড আপনাকে ঘুড়িয়ে দেখাবেন এই মসজিদটি।

বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হয় আলোকসজ্জা। সূর্যাস্তের পর এই মসজিদটির আলোকসজ্জা আপনার চোখ জুড়িয়ে দেবে। দিনের বেলায় দেখার থেকে সন্ধ্যার পর দেখা মসজিদটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মনে হবে।

একটি মুসলিম স্থাপত্য এবং প্রার্থনার জায়গা হিসাবে এখানে প্রবেশের জন্য আপনাকে অবশ্যই পরিশীলিত পোশাক পরিধান করতে হবে। নারীদের পা, হাত এবং মাথা ঢেকে রেখে এবং পুরুষদের লম্বা পোশাক পরতে হয়, যা তাদের শরীরকে ঢেকে রাখে। তবে মসজিদে প্রবেশের আগে বিনামূল্যে ঐতিহ্যবাহী পোশাক (আবায়া) সরবরাহ করা হয়। এর ফলে মসজিদ-উপযুক্ত পোশাক খুঁজে নেওয়ার বিড়ম্বনা থাকে না।

Share This Article

Share this post

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com