মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে সুচিকিৎসা। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে রোগীদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে গণমাধ্যমে যেসব তথ্য পাওয়া যায় তার মধ্যে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে রোগী ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা তৈরি,চিকিৎসা ও নার্সিংয়ে অদক্ষতা,আন্তরিকতার অভাব এমনকি চিকিৎসায় অপেশাদারিত্বের অভিযোগও ওঠে এসেছে। দেশের সরকারি হাসপাতাল গুলোর চিকিৎসার মান নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। দেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে মোট ৬৫৪ টি এতে মোট শয্যা রয়েছে ৫১ হাজার ৩১৬ টি। এসব সরকারি হাসপাতাল গুলোর সেবার মান নিয়ে রয়েছে হাজারো অভিযোগ। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এর তথ্যানুযায়ী,সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, অভিজ্ঞ চিকিৎসক,পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হয়রানিসহ নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আইসিডিডিআরবি এর তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষ বিদেশে বিশেষ করে ভারতে চিকিৎসা নিতে যায়। এতে বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যায়। ভারতের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদেশ থেকে মেডিকেল ট্যুরিজমে যত মানুষ দেশটিতে চিকিৎসা নিতে আসে তার ৫৫ শতাংশই আসে বাংলাদেশ থেকে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উন্নত চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে ক্রয়কৃত চিকিৎসা উপযোগী যন্ত্রপাতি,এক্সরে মেশিন সহ অনেক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হলেও রোগীরা তার কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সারাদেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,জেলা সদর হাসপাতাল ও জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিপুল সংখ্যক যন্ত্রপাতি নানা জটিলতায় অব্যবহৃত পড়ে আছে। দেশের সরকারি হাসপাতাল গুলোর চিকিৎসার মান নিয়ে জনগণের অভিযোগের শেষ নেই। উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদেরকে নিজ কর্মক্ষেত্রে না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। সরকারি হাসপাতালগুলোর সকল সংকট দূরীকরণ ও রোগীদের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। সেইসাথে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হলে চিকিৎসা সেবার ঘাটতি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব।
লেখকঃ মাহমুদুল হক হাসান,কলাম লেখক