‘সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে প্রিসাইডিং অফিসারকে জানানো বোধহয় সঠিক না’

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশের আগে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতির বিধান বাতিল, ভোটকক্ষে ১০ মিনিটের বেশি না থাকা—এমন বিধান বাতিলের দাবি জানিয়েছে নির্বাচন নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকরা।

শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে ‘গণমাধ্যমের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত বিধিমালা পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)। সহযোগিতায় ছিল বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন। সভায় এসব দাবি জানান তারা। 

এসময় সাংবাদিকদের নীতিমালা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ব্যক্তিগত মত হলো, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের আগে প্রিসাইডিং অফিসারকে অবহিতকরণ—এটা বোধ হয় সঠিক হলো না। যখন আমি অ্যাক্রিডেশন দিচ্ছি সাংবাদিকদের আমি ইতিমধ্যেই তাকে অনুমতি দিচ্ছি। এসব সমস্যা অত বড় না, ছোট সমস্যা। ইলেকশন কমিশনের উচিত হবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনায় বসা। আমরা একাধিকবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতাম। 

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সাংবাদিকদের বিরাট ভূমিকা আছে। আমি নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করবো এখনও সময় আছে, আপনারা বসবেন এবং আমার রিকুয়েস্ট হচ্ছে মেক ইট এজ ট্রান্সপারেন্ট অ্যাজ পসিবল। এটা করতে গিয়ে যদি দুই পা আগাতে হয়, আগান। 

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বলছেন যে তারা শতাব্দীর বেস্ট ইলেকশন করবেন। আমরাও চাই আপনি শতাব্দীর বেস্ট ইলেকশন করেন। কিন্তু আপনি যাদের ব্যবহার করবেন তারাই (মিডিয়া)। অ্যান্ড আই শুড বি অ্যাবসুলটলিস্ট ক্রিস্টাল ক্লিয়ার।

নির্বাচন কমিশনের গণমাধ্যমের সঙ্গে একাধিকবার বসা উচিত মন্তব্য করে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা একটি ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবেল ইলেকশন করতে চাই। ভালো নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার। বাকিটা হচ্ছে ইলেকশন কমিশনের কাজ। সরকার ইসিকে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে সাংবাদিকদের ভোটকক্ষে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে সাংবাদিক নীতিমালায়। যদি অবহিত করে প্রবেশ করতে হয় তাহলে আমাকে কেন নির্বাচন কার্ড দিচ্ছে ইসি? আবার প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিজেই যদি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে কী তিনি অনুমতি দেবেন? আবার শত শত মিডিয়াকে অনুমতির জন্য কথা বলতে গেলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার কাজ কীভাবে করবেন? কাজেই এই নীতিমালা কোনও অবস্থাতেই যুক্তিযুক্ত নয়। আমি মনে করি স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই আদেশটি একেবারে সাংঘর্ষিক। এটা কোনও অবস্থাতেই মেনে নেওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীন জেবেল বলেন, গত ২৩ জুলাই ইসি সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা প্রকাশ করে। এই নীতিমালা থেকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের আগে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিতকরণ এই ধারা বিলুপ্তি চাই। একটি ভোটকক্ষে দুজনের বেশি সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারবেন না এবং ১০ মিনিটের বেশি থাকতে পারবেন না—এমন ধারায় আমাদের আপত্তি আছে। ১০ মিনিটের বিষয়টি মোটেও বাস্তবসম্মত নয়।

এই নীতিমালায় সাংবাদিকদের সুরক্ষার বিষয়টি নেই উল্লেখ করে কাজী জেবেল বলেন, গত তিন নির্বাচনে সাংবাদিকদের জন্য যে নীতিমালা ছিল, সেটিকেই অনেকটা হুবহু রেখে নীতিমালা জারি করেছে কমিশন।

আরএফইডির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী বলেন, গত ২৩ জুলাই ইসি সাংবাদিকদের জন্য এই নীতিমালা জারি করলেও এটি সাংবাদিকবিরোধী নীতিমালা। কমিশন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না এটি করেই প্রণয়ন করেছে। গত ৬ আগস্ট আরএফইডি এই নীতিমালা প্রত্যাখান করলেও ইসি গত দুমাসে কোনও স্পষ্ট বক্তব্য দেয়নি।

বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক রাজার সভাপতিত্বে ও বিজেসি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব ও আরটিভি’র হেড অফ নিউজ ইলিয়াস হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. আল মামুন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন প্রমুখ।

Share This Article