মালয়েশিয়ার মালাকায় চলমান ১৯তম আসিয়ান মন্ত্রী পর্যায়ের ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম সম্মেলন (AMMTC) ও সংশ্লিষ্ট বৈঠকের প্রেক্ষাপটে UNODC-এর উপ-আঞ্চলিক প্রতিনিধি বেনেডিক্ট হফম্যান বলেন, সংগঠিত অপরাধ, বিশেষত জালিয়াতি ও অনলাইন অপরাধের বিস্তার এত দ্রুত হচ্ছে যে দেশগুলিকে তাদের প্রতিক্রিয়া কৌশল আরও গতিশীল করতে হবে।
তিনি জানান, অপরাধীরা এখতিয়ারের সীমান্তকে কাজে লাগিয়ে সুবিধাজনক দেশ থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং একাধিক জাতীয়তার আশ্রয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাত থেকে বাঁচতে চেষ্টা করে। এ কারণেই আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা, তথ্য বিনিময় এবং যৌথ অভিযান অত্যন্ত জরুরি।
হফম্যান সতর্ক করে বলেন, ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থপাচার, অবৈধ জুয়া ও জালিয়াতি কেন্দ্রগুলো এখন আন্তর্জাতিক অপরাধের অর্থায়নে বড় ভূমিকা রাখছে। “অর্থের প্রবাহ চিহ্নিত করতে পারলেই অপরাধী নেটওয়ার্ক ধরা সম্ভব,” তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও জানান, আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করার জন্য UNODC বহুস্তরীয় কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তথ্য বিশ্লেষণ জোরদার, ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি।
আসিয়ানের বৈচিত্র্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কেউ কেউ ইলেকট্রনিক প্রমাণ বিশ্লেষণে উন্নত হলেও অন্যরা সীমিত সম্পদে কাজ করছে। তাই যৌথভাবে সক্ষমতা একটি সাধারণ মানদণ্ডে উন্নীত করা জরুরি।
ফিলিপাইনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেনহার আবালোস সম্মেলনে বলেন, “আমাদের অঞ্চলের অপরাধীরা কেবল একটি দেশের সমস্যা নয়, বরং পুরো আসিয়ান সম্প্রদায়ের জন্য হুমকি। তাই এই মুহূর্তে আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া অপরিহার্য।”
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা লরেন্স ওং মন্তব্য করেন, “আমাদের কৌশলকে প্রযুক্তি-নির্ভর হতে হবে। সাইবার অপরাধীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে, তাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও সমানভাবে আধুনিক হতে হবে।”
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসিউশন ইসমাইল বলেন, “এই সম্মেলনের লক্ষ্য শুধু নিরাপত্তা জোরদার করা নয়, বরং একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ আসিয়ান গড়ে তোলা। আমাদের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতিই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখবে।”
বাংলাদেশি সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড. মো. ফারুক হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, “সাইবার অপরাধ এখন কোনো নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং জালিয়াতি, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস হ্যাকিং এবং ভুয়া অনলাইন বিনিয়োগ স্ক্যাম বেড়েছে। আসিয়ান যদি সাইবার নিরাপত্তার জন্য একটি যৌথ প্রতিরক্ষা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে, তবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিও এ থেকে উপকৃত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থপাচার ঠেকাতে প্রযুক্তি-ভিত্তিক নজরদারি ও তথ্য ভাগাভাগির কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও আসিয়ানের মধ্যে সহযোগিতার বড় সুযোগ রয়েছে।”
উল্লেখ্য, ১৯তম AMMTC সম্মেলন মালয়েশিয়ার আসিয়ান চেয়ারম্যানশিপ ২০২৫-এর অংশ হিসেবে ‘অন্তর্ভুক্তি ও স্থায়িত্ব’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ আসিয়ান গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি বহন করছে।