সাতক্ষীরা প্রাণনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে ১৩ বছর

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

সাতক্ষীরা শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পিএন স্কুল এন্ড কলেজ নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে নেই কোনো নিয়মিত অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক কিংবা সহকারী প্রধান শিক্ষক। এর ফলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে সৃষ্টি হয়েছে চরম স্থবিরতা। ২০২০ সাল থেকে ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম এবং অর্থ তছরুপের অভিযোগ পাওয়া উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে আর্থিক স্বচ্ছতা এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় সেখানকার বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের দায়িত্বে স্কুলের সভাপতি থাকার কথা থাকলেও, তাকে কখনোই সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এর ফলে হিসাব সংক্রান্ত অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয় এবং আর্থিক পরিস্থিতি অস্বচ্ছ হয়ে পড়েছে। এর ফলস্বরূপ, একাধিক বড় অঙ্কের টাকা সঠিকভাবে পরিচালিত হয়নি এবং বিভিন্ন অনিয়মের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক—কর্মচারীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টনে বিশৃঙ্খলা, শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, পাঠদান ও প্রশাসনিক কাজে অদক্ষতা দেখা দিচ্ছে। ফলে এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান একই হলেও গায়ের জোরে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে কলেজ শিক্ষকদের ভোটাধিকার না দেওয়া এবং অভিভাবক সদস্য নির্বাচনে কলেজ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে বছরের পর বছর ধরে।

অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের নানা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। ভর্তি, ক্লাস পরিচালনা, পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশে অনিয়ম বেড়েই চলেছে। শিক্ষার্থীরা জানায়, শিক্ষার মান দিন দিন নিম্নগামী হচ্ছে। অথচ প্রশাসনিক জটিলতার কারণে দীর্ঘদিনেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দ্রুত নিয়মিত অধ্যক্ষ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না দিলে প্রতিষ্ঠানের মান ও মর্যাদা আরও সংকটে পড়বে।

এদিকে সাতক্ষীরা প্রাণনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্টের অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাঃ ওবায়দুল্লাহ প্রধান। অভিযোগে বলা হয়েছে গত ১০/০৯/২০২৫ ইংরেজি তারিখে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সাতক্ষীরা প্রাণনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র রায় চৌধুরী ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আকর্ষিক পদত্যাগ করেন। এর পর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম ১১/০৯/২০২৫ তারিখের মিটিং এ পরবর্তী জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোঃ ওবায়দুল্লাহ অধ্যক্ষ/ প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নিয়োগ প্রদান করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ/ প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দুই দিন পর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে সুবিধাভোগী কতিপয় শিক্ষক, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে, কয়েকজন বহিরাগত সন্ত্রাসী সহ শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করে মব সৃষ্টি করে। তারা প্রতিষ্ঠানের প্রধান গেইট বন্ধ করে দিয়ে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে প্রাণনাশের হুমকি ও পদত্যাগে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রীমা পারভীন ও সুদীপ্ত মন্ডলকে ব্যাপক মারপিট করে। পরে আহত অবস্থায় তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভতীর্ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে ৪ (চার) জন পুলিশ প্রেরণ করা হলেও খন্ডকালীন শিক্ষক সাইফুদ্দিনের নির্দেশনায় সন্ত্রাসীরা গেটে তালা দিয়ে পুলিশকে ঢুকতে বাধা দেয়।
আর্থিক স্বচ্ছতা এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে বাধাদানকারী ফ্যাস্টি সরকারের সুবিধাভোগী শিক্ষকদের বিচারের দাবি সংশ্লিষ্টদের।

Share This Article